পাগলা-সৈয়দপুর সড়কে দুর্ভোগ/ ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়া

৩০০ কোটি টাকা দিয়ে রানীগঞ্জ সেতু নির্মাণ করা হয়েছে কিন্তু এর পিছনে দুইটি বেইলি ব্রিজÑকাটাখালি ও ভমভমি; রেখে দেয়া হয়েছে আগের মতো জরাজীর্ণ। ফলে সুনামগঞ্জ-পাগলা-রাণীগঞ্জ সড়ক ব্যবহার করতে পারছে না কোনো বড় গাড়ি। এই অবস্থাকেই বলে ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়া। রাণীগঞ্জ সেতু নির্মাণের মূল উদ্দেশ্যকেই প- করে দিয়েছে এই দুই সেতু ও সৈয়দপুর পর্যন্ত কিছু সরু সড়ক। অথচ সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করার সময়েই এই পিছনের জরাজীর্ণ সেতু ও সামনের সরু সড়ক নতুন করে নির্মাণের বিষয়টি থাকা উচিৎ ছিলো। এতে হয়তো ব্যয় বরাদ্দের পরিমাণ কিছুটা বাড়ত। সেই বরাদ্দের সংস্থান কঠিন ছিলো না। সেই তো এখন বলা হচ্ছে সেতুগুলো নতুন করে নির্মাণ করা হবে। এখন যদি টাকা পাওয়া যায় তাহলে তখনও পাওয়া যেত। আমাদের পরিকল্পকদের সীমাবদ্ধতার কারণে সময়ের কাজ সময়ে করা হয় না। পরে যখন করা হয় তখন আগের বড় কাজের সন্তুষ্টির জায়গা নষ্ট হয় অনেক।
গতকাল দৈনিক সুনামগঞ্জের খবরে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল ৯ টায় ভমভমি বেইলি সেতুর উপর একটি তেলবাহী লরি সেতুর উপর উঠার পর অতিরিক্ত চাপে সেতুর তিনটি পাটাতন ভেঙে যায়। এর ফলে সেতুর উভয় পাশে তৈরি হয় যানজট। কোনো গাড়িই এপাড় ওপাড় হতে না পারায় গাড়ির দীর্ঘ সারি তৈরি হয়। মেরামতের পর বিকালে সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু করা সম্ভব হয়েছে। ভমভমি ও কাটাখালির জরাজীর্ণ দুইটি বেইলি সেতুর কারণে সুনামগঞ্জ থেকে কোনো আন্তজেলা বাস এই রাস্তা দিয়ে কখনও চলাচল করে না। কিছু মালবাহী ট্রাক, লরি ও ছোট যানবাহন এই সড়ক ব্যবহার করে। ভমভমি সেতুর পাটাতন ভাঙার মধ্য দিয়ে প্রমাণ হলো সড়কটি যানবাহন চলাচলের জন্য অতিমাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ। তেলবাহী লরিটি পাটাতন ভাঙার কারণে বড় ধরনের দুর্ঘটনায় পড়তে পারত। এই সেতু দুইটির কারণে ৩০০ কোটি টাকার রাণীগঞ্জ কুশিয়ারা সেতুটি আপাতত তেমন করে কোনো কাজে লাগানো সম্ভব হচ্ছে না। এই ধরনের উন্নয়ন কাজের কোনো মানে হতে পারে না।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে বলা হয়েছেÑ ১০ টনের অধিক মালামাল বহনযোগ্য যানবাহন এই পথে চলাচল না করার বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে। এখন কেন? আগে কেন এরকম ঘোষণা দেয়া হলো না? অপেক্ষা করা হয়েছে কোনো দুর্ঘটনা ঘটা পর্যন্ত? এও আরেক অদ্ভুত কার্যকৌশল। সময়ের কাজ সময়ে না করার অপচর্চা। সেতুর সক্ষমতা বিবেচনায় আগে থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ ছিলো। তা করা হয়নি আমাদের অভ্যাসগত কর্মসংস্কৃতির কারণেই। কর্তৃপক্ষ বলেছেন আগামী এপ্রিল মাসে দুই বেইলি সেতুর স্থলে নতুন সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হবে। এই সেতু দুইটি নির্মাণ করতে নিশ্চয়ই বছর দুই সময় লাগবে। তার মানে হলো রাণীগঞ্জ সেতু নির্মাণ গত বছরের অক্টোবর মাসে শেষ হওয়ার পর থেকে আরও তিন বছর অপেক্ষা করতে হবে এর সুবিধা ভোগ করতে। যথেচ্ছাচার আর কাকে বলে? আমরা আশা করতে চাই প্রতিশ্রুতি মতে এপ্রিল মাস থেকেই নতুন সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করে যথাসম্ভব দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করে এই সড়ক সকল ধরনের যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হোক। এই সড়ক দিয়ে যে স্বপ্ন রচনা করেছিলেন এই অঞ্চলের মানুষ তা আজ কিছু দায়িত্বহীনতার কারণে ফিকে হতে বসেছে। সেই স্বপ্ন একেবারে মিলিয়ে যাওয়ার আগেই পাগলা-জগন্নাথপুর-সৈয়দপুর সড়কটিকে যাত্রীবাহী বাস ও অন্যান্য বড় যানবাহন চলার উপযোগী করা হোক এই আমাদের কামনা।