পাটলাই নদীতে নৌজট/ চোরের উৎপাত, কয়লা লুট

স্টাফ রিপোর্টার
তাহিরপুরে পাটলাই নদীর নাব্যতা সংকটে তৈরি হয়েছে নৌজট। আটকা পড়েছে শতাধিক কয়লা ও চুনাপাথর বোঝাই নৌকা। পণ্য নির্ধারিত গন্তব্যে পাঠাতে না পেরে কোটি টাকার লোকসানের মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। প্রায় ১৫ বছর ধরে শুষ্ক মৌসুমে পাটলাই নদীতে নৌজটের তৈরি হলেও খননের উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের। নৌজটে আটকে থাকা বাল্কহেড থেকে কয়লা চুরির অভিযোগও উঠেছে।
তাহিরপুরে পাটলাই নদীর দুই কিলোমিটার অংশ খুবই সরু ও অগভীর। এতে প্রতিদিন দু-তিনটির বেশি বাল্কহেড নদীর সুলেমানপুর এলাকা পাড়ি দিতে পারে না। বছরের পর বছর পলি পড়ে নদীর তলদেশে ভরাট হয়ে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। এ কারণে গেল ২৫ দিন ধরে নদীর সুলেমানপুর অংশে তৈরি হয়েছে নৌজট। বর্তমানে নদীতে শতাধিক নৌকা আটকে রয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পনেরো বছর ধরে পাটলাই নদীর সুলেমানপুর এলাকায় নৌজট তৈরি হয়। বছর বছরই দায়িত্বশীলরা নদী খননের কথা বলেন। তবে এই নদী খননের কার্যকর কোনো উদ্যোগ তারা দেখছেন না।
পাটাবুকার বাসিন্দা মো. খাইরুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর এই জায়গায় নৌজট তৈরি হয়। প্রতিবছরই কর্মকর্তারা আমাদের আশ^াস দেন নদী খননের। তবে পাটলাই নদী খননের কোনো উদ্যোগ আমরা দেখিনি। এতে আমরা ব্যবসায়ীরা লোকসানের মধ্যে রয়েছি।
নৌ চালক মো. গউস আলী বলেন, আমরা পনেরো দিন ধরে নৌজটে আটকে আছি। বের হতে পারছি না। অন্যান্য নদী খনন হলেও এই পাটলাই নদী খনন হচ্ছে না। ফলে আমাদের দুর্ভোগ কমছে না। মাল পরিবহন করে যে টাকা পেতাম সে টাকা চলে যাচ্ছে নৌজটে পড়ে। খাবার খরচ অতিরিক্ত লাগছে, বাড়িতে কোনো টাকা পাঠাতে পারছি না। বউ বাচ্চা উপোস থাকবে।
নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দার বাসিন্দা মো. সুকেদ মিয়া বলেন, বড়ছড়া থেকে কয়লা নিয়ে আমরা ভৈরব যাবো। এখানে পঁচিশ দিন ধরে নৌজটে আটকে আছি। কয়লা মালিকের কাছে পৌচ্ছাতে পারলে ৬০ হাজার টাকা ভাড়া পেতাম। এখন এই টাকা খরচ হচ্ছে যাচ্ছে নৌজটে পড়েই।
কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন তালুকদার বলেন, আমাদের এলাকায় তিনটি শুষ্ক স্টেশন দিয়ে কয়লা, চুনাপাথর আমদানি হয়। সে কয়লা ও চুনাপাথর নদী পথে দেশের বিভিন্ন জায়গায় আমরা পাঠাই। নৌজটের কারণে আমাদের ব্যবসা পুরোপুরি স্থবির হয়ে পড়েছে। শুষ্ক মৌসুম আমাদের ব্যবসার করার সময়। তবে পনেরো বছর ধরে নৌজটের কারণে আমাদের লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে। প্রতিবছরই আমরা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলি নদী খননের ব্যাপারে। কিন্তু কোনো কাজে আসছে না। দায়িত্বশীলদের উদাসীনতার কারণেই নদী খননের উদ্যোগ নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে এই নৌজটে আটকে থাকা বাল্কহেড থেকে কয়লা চুরিরও অভিযোগ উঠেছে। ১০ থেকে ১৫ জনের একটি চক্র এই চুরির সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ করছেন সংশ্লিষ্টরা। গেল মঙ্গলবার রাতে এলাকার ব্লু ওয়াটার নামের এক কয়লাবাহী বাল্কহেডে চুরির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ডাকাতদের একটি সংঘবদ্ধ দল রাতের আঁধারের অস্ত্রের মুখে নৌকা মাঝিকে জিম্মি করে বাল্কহেড থেকে প্রায় ২৫ টন কয়লা লুট করে নিয়ে গেছে বলে জানা যায়।
ব্লু ওয়াটার নৌ পরিবহনের মাঝি লাদেন বলেন, গত ৭ দিন ধরে নৌজটের কারণে নৌকা আটকে আছে সুলেমান এলাকায়। এখানে অবস্থান করে বের হওয়ার চেষ্টা করছি। গেল মঙ্গলবার গভীর রাতে অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে নৌকায় উঠে আমাদের ভয় দেখায় ১০- ১৫ জন লোক। আমাদের হাতে মোবাইল কেড়ে নেয়। এসময় ছোট ছোট নৌকায় করে কয়লা ভরতে শুরু করে। রাতভর কয়লা লুট করেছে।
মাসুক এন্টার প্রাইজের সত্ত্বাধিকারী জিল্লুর রহমান বলেন, আমার ট্রলারে ১৬৫ টন কয়লা ছিল। ডাকাতরা আমরা নৌকা থেকে প্রায় ২৫ টন কয়লা লুট করেছে। আমি এই কয়লাগুলো ঢাকার ব্যবসায়িদের দেয়ার কথা। আমি এই ঘটনায় থানায় জিডি করেছি। পুলিশ আমার এই কয়লাগুলো উদ্ধার করে দিক, না হয় আমি পথে বসে যাব।
এ ব্যাপারে তাহিরপুর থানার ওসি ইফতেকার হোসেন বলেন, বাল্কহেড ডাকাতির একটি অভিযোগ পেয়েছি। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখিছি। এছাড়াও চুরি, ডাকাতি যাতে না হয় সেজন্য আমরা এলাকাটি নজরদারিতে রেখেছি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, পাটলাই নদী খননের সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। শেষ হলে খননের জন্য নতুন প্রকল্প নেয়া হবে। খনন হলে নদীর নাব্যতা ফিরে আসবে। এতে নৌজট তৈরি হবে না।