বিশেষ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জ জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে মুক্তিযুদ্ধসহ ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী পুরাতন সার্কিট হাউসকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ প্রতিষ্ঠান হিসাবে অবিকল গড়ে তোলার কাজ থেমে গেছে। সংরক্ষণের কাজে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি ও জনআকাঙ্ক্ষা মোতাবেক কাজ না করারও অভিযোগ ওঠেছে।
আসামী প্যাটার্নের আদলে থাকা সুনামগঞ্জ পৌর এলাকার টিনশেড পুরাতন সার্কিট হাউসে ১৯৫৬ সালের ২৬ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একরাত এসে অবস্থান করেছিলেন। ১৯২৪ সালে ভারতের স্বনামধন্য স্বাধীনতা সংগ্রামী সরোজিনী নায়ডু এসে রাত যাপন করেন। ঐতিহাসিক এই স্থাপনাটিকে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের জন্য উপরের টিন খুলে পুরাতন নষ্ট হয়ে যাওয়া কাঠের বদলে লোহার অ্যাঙ্গেল ব্যবহার করা হবে। মেঝেতে টাইলস এবং উপরের সিলিং বদলে দেওয়া হবে। টিনসেড ঘরের সামনে বঙ্গবন্ধুর ম্যুড়াল দৃষ্টিনন্দন করে প্রবেশ গেট ও বাউন্ডারী দেওয়াল করার কথা ছিল। ক্যাম্পাসের ভেতরে কিছু ওয়াকওয়ে করার কথাও ছিল। সামনে বসার গোলচত্বর হবার কথাও ছিল।
স্থাপনাটিকে ঠেকসইভাবে অবিকল সংরক্ষণ করার কাজ শেষে এই অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের নানা ঐতিহাসিক বিষয় এখানে সংরক্ষণ করার পরিকল্পনা ছিল শুরুতেই।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিকের প্রচেষ্টায় এই ঐতিহ্যবাহি স্থাপনাটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছিল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।
৯৮ লাখ ৬০ হাজার ২৭০ টাকায় মেসার্স আতিকুর রহমান নামের একজন ঠিকাদার ঐতিহাসিক এই স্থাপনার সংস্কার কাজ শুরু করেন ২০২১ সালে। গেল বছরের জুলাই মাসে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাজের মেয়াদ শেষ হলেও এখনো ডিজাইন মোতাবেক কাজ শেষ হয় নি। বঙ্গবন্ধুর ম্যুড়ালও স্থাপন হয় নি। রং করা হয় নি। সামনের কাজও করা হয় নি।
সোমবার দুপুরে ওখানে গিয়ে দেখা গেছে, কেউ ওখানে নেই। সামনের পকেট গেইটে কাজ না হওয়ায় যে কেউ ওখানে ঢুকতে পারছে। সার্কিট হাউসের দরজাও খোলা। ঘরের মেঝের টাইলসের কাজ হয়েছে, দুটি পকেট সিড়ি ও সামনের সিড়িতে কাজ বাকী আছে। সামনের সিড়ি অবিকল রাখার কথা থাকলেও এর ডিজাইন পরিবর্তন করা হয়েছে। টেনিস গ্রাউন্ডের এবং সামনের গোল চত্বরেরও কাজ হয় নি। পুরো এলাকায় ময়লা আবর্জনা ও বন ঝঙ্গল লেগে অপরিস্কার অবস্থায় রয়েছে।
সার্কিট হাউসের পাশের উকিলপাড়ার বাসিন্দা অ্যাড. কল্লোল তালুকদার চপল বললেন, ঠিকাদার বা নির্মাণকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান কেউই মানুষের আবেগের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তারা সামনের সিড়িও অবিকল করেন নি। বঙ্গবন্ধুর ম্যুড়ালও এখনো নির্মাণ করেন নি। প্রায় এক কোটি টাকায় কী কাজ হলো, সেটিও এখনো দৃশ্যমান হয় নি।
শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরী’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. সালেহ আহমদ বললেন, পুরাতন সার্কিট হাউসের নানা স্মৃতি বলে বেড়ান সুনামগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ। এই প্রতিষ্ঠানটি হুবুহু সংরক্ষণ করার দাবি আছে। যারা এখানে কাজ করছেন তাদেরকে অবশ্যই সুনামগঞ্জবাসীর আবেগকে গুরুত্ব দিতে হবে।
সুনামগঞ্জের সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)’র সভাপতি অ্যাড. আইনুল ইসলাম বাবলু বললেন, সুনামগঞ্জবাসীর আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটানোর জন্য ঐতিহ্যবাহী এই স্থাপনাটি অবিকল সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কবি ও গবেষক ড. মোহাম্মদ সাদিকের চেষ্টায় এই প্রতিষ্ঠানের জন্য অর্থ বরাদ্দও হয়। কিন্তু নির্মাণ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি মানুষের আকাঙ্খা অনুযায়ী গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন না।
এই কাজের দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত এলজিইডির প্রকৌশলী হেলাল আহমদ কাজের মেয়াদ শেষ হবার বিষয়টি স্বীকার করে বললেন, কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে ছাপ দিচ্ছি আমরা।
ঠিকাদার আতিকুল ইসলাম বললেন, বেশিরভাগ কাজ শেষ, অন্য কাজও অবশ্যই শেষ করা হবে।
সুনামগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বললেন, পুরাতন সার্কিট হাউসের সংরক্ষণের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। ঠিকাদারকে অবশ্যই ডিজাইন অনুযায়ী কাজ শেষ করতে হবে। না হয় তার বিল প্রদান করা হবে না।
- প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর বিলীনের আশংকা
- মেসির হাতেই ফিফার বর্ষসেরা ‘বেস্ট’ ট্রফি