প্রাথমিকের গণ্ডি পেরোতে পারছে না সুনামগঞ্জের অনেক শিক্ষার্থী

স্টাফ রিপোর্টার
সুনামগঞ্জের দুর্গম শাল্লা উপজেলার মনুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়টিতে গেল বছর শিক্ষার্থী ছিলো ২০৫ জন। এবছর ৩৮ জন কমে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৬৭ জন। পরিবারের দরিদ্রতার কারণে শিক্ষার্থীদের ঝড়ে পড়ার হার বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এই বিদ্যালয়টিতে গেল বছর শিশু শ্রেণিতে পাঁচ বছর বয়সি শিক্ষার্থী ছিলো ১৬ জন। এবার বিদ্যালয়ে চার ও পাঁচ বছর বয়সি শিশুদের নিয়ে এই শ্রেণিতেই দুটি ভাগ করা হয়েছে। এই শিশু শ্রেণিতে প্রথমভাগে ৪ বছর বয়সি শিক্ষার্থী ১১ ও দ্বিতীয়ভাগে ৫ বছর বয়সি শিক্ষার্থী ২১ জন পড়াশুনা করছে।
বিদ্যালয়ের তথ্যমতে, গত বছর প্রথম শ্রেণিতে ৪২, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৩২, তৃতীয় শ্রেণিতে ৪৬, চতুর্থ শ্রেণিতে ৩৯ ও পঞ্চম শ্রেণিতে ৩০ জন শিক্ষার্থী ছিলো। এবছর প্রথম শ্রেণিতে ২৪, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৩৪, তৃতীয় শ্রেণিতে ২৫, চতুর্থ শ্রেণিতে ২৬ ও পঞ্চম শ্রেণিতে ২৬ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে।
এই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বিদ্যুৎ বরণ সরকার বলেন, এখানকার বেশিরভাগ পরিবার নি¤œ আয়ের দিনমজুর। সারাদিন কাজ করে যা পায়, তা দিয়ে সংসার চালায়। এই পরিবারগুলোর শিক্ষার্থীরা বাবার সঙ্গে কাজে যোগ দেয়। যখন বোরো ধান রোপন ও ধান কাটার সময় আসে তখন বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী খুবই কম আসে। তারা বাবার সঙ্গে কৃষি কাজে যোগ দেয়। এছাড়াও যখন পাহাড়ি ঢলে ফসল নষ্ট হয়ে যায়, তখন এই পরিবারগুলো কাজের উদ্দেশ্যে শহরে চলে যায়। এতে শিক্ষার্থীরা ঝড়ে পড়ে।
জেলা শিক্ষা অফিসের তথ্যেমতে, জেলায় সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে মোট প্রাথমিক বিদ্যালয় ২ হাজার ৭২৩ টি। এই বিদ্যালয়গুলোতে মোট শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে ৩ লাখ ৮১ হাজার ৪৯ জন। মোট শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঝড়ে পড়ার হার ৯.৩ ভাগ।
উপজেলা পর্যায়ে মোট শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ৭.৮২ ভাগ, দোয়ারাবাজারে ৮.২৭ ভাগ, বিশ^ম্ভরপুরে ৯.৫০ ভাগ, ছাতকে ৯.৫৬ ভাগ, তাহিরপুরে ৯.৫৬ ভাগ, জামালগঞ্জে ১২.৪৭ ভাগ, ধর্মপাশায় ১০. ৭২ ভাগ, শাল্লায় ৫ ভাগ, দিরাইয়ে ২. ৭৫ ভাগ, জগন্নাথপুরে ১২.৯৩ ভাগ ও শান্তিগঞ্জে ১০. ৭৪ ভাগ শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ছে।
সংশ্লিষ্টা বলছেন, শিশুদের ঝড়ে পড়ার প্রধান কারণ হলো দরিদ্রতা। হাওরাঞ্চলের বেশিরভাগ পরিবার নি¤œ আয়ের। তারা দিনে রোজগার করে পরিবারের খরচ বহন করেন। এছাড়াও দুর্গম এলাকায় বর্ষাকালে অনেক বিদ্যালয় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন হয়ে পড়ে। তখন শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসতে বিপাকে পড়তে হয়। অনেক শিক্ষার্থীদের নৌকায় বিদ্যালয়ে যেতে হয়। এজন্য এই এলাকায় প্রাথমিক পর্যায়ে অনেক শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ে।
শাল্লা উপজেলার বাহারা ইউনিয়নের বাসিন্দা সন্দিপন তালুকদার বলেন, আমাদের এলাকায় এমনও বিদ্যালয় রয়েছে যেখানে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। একারণে শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকরা সময় মতো বিদ্যালয়ে যেতে পারেন না। বর্ষাকালে এই সমস্যা আরও ব্যপক আকার ধারণ করে।
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বাঁধনপাড়ার বাসিন্দা নিহার রঞ্জন দাশ বললেন, করোনাকালীন সময়ে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়েছে। এছাড়াও পরিবারের দরিদ্রতা ও দুর্গম এলাকায় সব সময় বিদ্যালয়ের সঙ্গে সড়ক পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকাও শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ।
এবিষয়ে জানতে চাইলে জেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মাহবুব জামান বলেন, এখানে ঝড়ে পড়ার প্রধান কারণ হলো ভৌগোলিক সীমাবদ্ধতা। বন্যা, খড়ার সময় শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যেতে পারে না। অর্থনৈতিকভাবেও অনেক পিছিয়ে রয়েছে এই জেলা। সে কারণেও শিক্ষার্থীরা ঝড়ে পড়ছে। তবে শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়া বন্ধ করতে আমরা কাজ করছি।