বিশেষ প্রতিনিধি
বৈশাখে হাওরের আবহাওয়ার পূর্বাভাস এ বছর আশা জাগানিয়া। বোরোর ফলনও ভালো হয়েছে। সব মিলিয়ে কৃষকরা বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দেখছেন। বুধবার হাওরের কৃষক, আবহাওয়াবিদসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে কৃষকরা আছেন ফুরফুরা মেজাজে।
ভাটির জেলা হিসেবে পরিচিত সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলার ১৪২ হাওরের বোরো ধানের শীষে এখন ফুল বেরিয়েছে। কোন কোন ধানের শীষে ধান বোরোনো শুরু হয়েছে।
মার্চের শুরুতে অর্থাৎ চৈত্রের মাঝামাঝি সময়ে বৃষ্টি হওয়ায় ধানের গোছা বলবান হয়েছে। এজন্য শীষভর্তি এবার ধানের ফুল।
দিরাই উপজেলার রাজাপুর গ্রামের বড় কৃষক আব্দুস ছাত্তার বললেন, সঠিক সময়ে বৃষ্টি হওয়ায়, এবার ধানের গোছা শক্তিশালী বা বলবান হয়েছে। গোছায় গোছায় ফুলে ভরে গেছে। সকালে (বুধবার সকালে) ক্ষেতের আইলে (ক্ষেতের সীমানা) গিয়ে মন জুড়িয়ে গেছে। চৈত্রের বাকি ১৫ দিন এবং বৈশাখের ১৫ দিন আবহাওয়া অনকূলে থাকলে, ফলন নিয়ে কোন দুশ্চিন্তা নেই। এই কৃষক হাসিভরা মুখে বললেন, ‘মনটা এবার ভালো, বাদ- বাকি আল্লাহ্ ভরসা।’
বিশ^ম্ভরপুরের রাধানগরের বড় কৃষক আব্দুল হেকিম বললেন, গত কয়েক দিন হয় বৃষ্টি হচ্ছে। আগে ভাগে বৃষ্টি হওয়ায় আকাশ হালকা হচ্ছে। ফসল কাটার সময় আকাশ ভালো থাকতে পারে। অতিরিক্ত বৃষ্টি হওয়ায় ধানের কিছু ফুল ঝড়েছে। এরপরও ফলন এবার ভালো হবে।
শাল্লার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বড় কৃষক ছত্তার মিয়া জানালেন, সময়মত বৃষ্টি হওয়ায় দুশ্চিন্তা দূর হয়েছে। এখন আকাশ মেঘলা থাকায়, ধান কাটার সময় (বৈশাখ মাসে) খরা থাকবে। তাতে পাকা ধান গোলায় তুলতে সুবিধা হবে।
জামালগঞ্জের হালির হাওরের বদরপুর গ্রামের কৃষক খোকন মিয়া বললেন, ধানের ফুল থেকে সবুজ ধান বের হওয়া শুরু হয়েছে। এই সময়ের বৃষ্টি শীষে ধানের দানা বাধতে সহায়ক হবে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারি আবহাওয়াবিদ সজিব হোসাইন বললেন, আগামী কয়েকদিন আবহাওয়া একই রকমের থাকবে। সুনামগঞ্জের উজানেও একই ধরণের আবহাওয়া থাকবে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের জলবায়ু মহাশাখার বিভাগীয় প্রধান আবু সাঈদ চৌধুরী বললেন, মেঘের উচ্চতা নিচে নামায় এবং বায়ুম-লে জলীয় বাস্পের পরিমাণ বেশি ও বায়ু প্রবাহ থাকায় ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। এসব কারণে সুনামগঞ্জে বৈশাখের ধান এবার নির্বিঘেœ কাটা যেতে পারে। এপ্রিল মাসে ভারী বৃষ্টি হবার আশংকা সুনামগঞ্জে কিংবা তার উজানেও আপাতত নেই দেখা যাচ্ছে।
অবশ্য বিশ^ম্ভরপুরের কৃষক ও গণমাধ্যম কর্মী স্বপন কুমার বর্মণ বলেছেন, গত কয়েকদিন যেভাবে বৃষ্টি হয়েছে। এভাবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে হাওরের নিচু অংশের ধান জলাবদ্ধতায় নষ্ট হবার সংখ্যা আছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বললেন, সুনামগঞ্জে এবার বোর চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই লাখ ২২ হাজার ৩০০ হেক্টর, চাষাবাদ হয়েছে দুই লাখ ২২ হাজার ৭৯৫ হেক্টর। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা এবার ১৩ লাখ ৫৩ হাজার টন। আশা করা হচ্ছে উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
- ২৮ ধানে মাথায় হাত
- ছাতকে বৈকালিক চেম্বার উদ্বোধন