বজ্রপাতে মৌসুমী মৃত্যু শুরু হয়ে গেছে। গতকাল দৈনিক সুনামগঞ্জের খবরে প্রকাশিত একটি সংবাদ থেকে জানা যায় জামালগঞ্জ উপজেলার মিনি পাগনা হাওরে জমি থেকে বাড়ি ফেরার পথে জামালাবাজ গ্রামের আবু হানিফ নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে বজ্রপাতে। জেলার হাওরাঞ্চলে প্রতিবছরই মার্চ মাস থেকে শুরু করে পুরো বর্ষা মওসুমে বজ্রপাতে বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটে থাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে প্রাণহানির দিক থেকে বজ্রপাতই সবচাইতে বেশি ক্ষতিকর। ফসল ফলানো ও মাছ ধরার কারণে হাওরাঞ্চলের মানুষের হাওরে থাকতে হয়। বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কোনো কার্যকর উপায় উদ্ভাবিত না হওয়ায় অধিক মৃত্যু ঘটে। জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে হাওরে গমন করা ছাড়া মানুষের কোনো উপায় নেই। বজ্রপাতজনিত ঝঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁুঁকি নিয়েই জেলে-কৃষকদের হাওরে যেতে হয়। জীবিকার তাড়না মানুষের এতোই প্রবল থাকে যে, কোনো ঝুঁকিই তাকে ফেরাতে পারে না। সমস্যা হলো আদিকাল থেকেই বজ্রপাতের মতো ভয়ানক প্রাকৃতিক দুর্যোগটির উপস্থিতি ছিলো। কিন্তু এ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য উপায় উদ্ভাবনে তেমন গুরুত্ব দেয়া হয়নি। সম্ভবত আগে হাওরে মানুষের চলাচল এখনকার মতো এতো বেশি ছিল না বলে মৃত্যুর ঘটনাও তখন কম ঘটত। গত কয়েক দশক যাবৎ বজ্রপাতে মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় এ নিয়ে আলোচনাও আগের যেকোনো সময়ের চাইতে অনেক বেড়েছে । দৈনিক সুনামগঞ্জের খবর প্রকাশের পর থেকেই এই ভয়ানক প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে আলোচনা করে আসছে এবং বজ্রপাতকে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার আওতাধীন একটি দুর্যোগ হিসাবে ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে আসছে। ব্যাপক আলোচনার ভিত্তিতে সরকার এই বিষয়টিকে বেশ গুরুত্ব দিয়ে বজ্রপাতকে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার আওতায় নিয়ে এসেছে।
খুব সহসা এই প্রাকৃতিক দুর্যোগকে নিয়ন্ত্রণ করার মতো উপায় উদ্ভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। যা আছে তা হলো হাওরে বজ্র নিরোধক দ- স্থাপন, তাল গাছ রোপণ, হাওরে বিশ্রামাগার তৈরি ইত্যাদি কিছু কার্যক্রম। দুঃখের বিষয় হলো এই কাজগুলো এখনও হাওরে শুরু করা যায়নি। ফলে সম্পূর্ণ অরক্ষিত ও ঝুঁকিপূর্ণ হাওরেই কাজে বেরোতে হয় জেলে-কৃষকদের। হাওরকে বজ্রপাতের বিপদ থেকে রক্ষা তথা হাওরের প্রাণশক্তি জেলে-কৃষকদের জীবনের নিশ্চয়তার জন্য এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করি। এছাড়া বজ্রপাতে নিহত-আহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়টিও সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা উচিৎ বলে আমরা মনে করি। মনে রাখতে হবে, যে ব্যক্তিটি উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সংযুক্ত হয়ে বজ্রপাতে মৃত্যুবরণ করেন তিনি তাঁর পরিবারের সক্ষম ব্যক্তি। এই ব্যক্তিকে হারানোর মধ্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট পরিবারটির আয় উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে যায়। ওই পরিবারকে পুনর্বাসিত করা রাষ্ট্রের মানবিক দায়িত্ব বলে আমরা মনে করি। কোনো মৃত্যুই আর্থিক তুল্যমূল্যে পরিমাপ করা সম্ভব নয়। তারপরেও আর্থিক সহায়তার বিষয়টি মুখ্য। এখন যে পরিমাণ আর্থিক সহায়তা দেয়া হয় তা না দেয়ার মতো। এই পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে। মনে রাখতে হবে দেশের উৎপাদন প্রক্রিয়াকে সচল রাখতেই ওই ব্যক্তি নিজের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলে হাওরে নেমেছিলেন।
এ ছাড়া বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে কার্যকর উপায় ও কৌশল বের করতে গবেষণা কাজের উপর সবিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। মানুষ প্রকৃতির ঝুঁকিকে মোকাবিলা করেই এগিয়েছে। প্রকৃতির কাছে কখনও পরাস্ত হয়নি মানুষ। মানুষের এই অমিত সম্ভাবনাই সকল উন্নয়নের চাবিকাঠি। আমরা বিশ্বাস করি বজ্রপাতের মৃত্যুকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে একদিন। তার আগ পর্যন্ত এই বিপদকে সহনীয় মাত্রায় রাখাসহ সব ধরনের উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। হাওর অর্থনীতির সহায়ক ব্যবস্থাদির প্রচলন করা সরকারের অঙ্গীকারও বটে। কারণ এই বিশাল হাওরাঞ্চল হলো কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশের প্রাণবায়ু। একে যেকোনো উপায়ে সচল রাখাটাই হলো আশু কর্তব্য।
- জাতির পিতার জন্মদিন আজ
- ৮০০ মিটার বাঁধ অরক্ষিত রেখে কাজ শেষ করতে তোড়জোড়