স্টাফ রিপোর্টার
সুনামগঞ্জের শতবর্ষী বাউল-সাধক মো. মকরম আলী শাহ ওরফে ফকির মকরম শাহ (১০৮) আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গত শুক্রবার রাত সোয়া ১০টায় সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের বাহাদুরপর গ্রামের বাড়িতে বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
শনিবার জোহরের নামাজের পর বাইশগ্রাম বাহাদুরপুর মাদ্রাসার ঈদগাহ মাঠে তার জানাজার নামাজ হয়। জানাজায় সামাজিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। এরপর পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
ফকির মকরম শাহ’র ছেলে শাহজাহান সিরাজ বললেন, ‘আমার বাবা ছিলেন একজন সাধক মানুষ। তিনি ছিলেন একজন শিক্ষিত বাউল। সারাজীবন সুফিবাদের প্রতি মানুষকে আহ্বান করে গেছেন। তিনি শুধু আমার বাবা নন, তিনি আমার গুরু। আমার বাবার দেখানো পথে আমি হাঁটতে চাই। সবাই আমার বাবার ত্রুটিবিচ্যুতি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। দোয়া করবেন।’
মকরম শাহের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে সুনামগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক শামছুল আবেদীন বলেন, ‘আমরা আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের একজন অভিভাবক হারালাম। জানি এ বিয়োগ পূরণ হওয়ার নয়। সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিটি শিল্পী-কর্মী ওনাকে আজীবন মনে রাখবে। আমরা গভীরভাবে শোকাহত।’
মকরম আলী শাহ বাহাদুরপর গ্রামে ১৩২২ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাসের কোনো এক ভোরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম ফকির সিফাত আলী শাহ, মা খোদেজা বিবি।
মকরম শাহ বাইশগ্রাম বাহাদুরপুর মাদ্রাসা থেকে প্রাথমিক শিক্ষা নেন। এরপর সিলেটের গোলাপগঞ্জ রানাপিং মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করেন।
ছোটবেলা থেকেই তার মনে সঙ্গীতের প্রতি ছিল অপরিসীম আগ্রহ। মকরম শাহর বাবা সিফাত আলী শাহ দীর্ঘদিন সঙ্গীতের আধ্যাত্মিক সাধনায় ব্রতী হয়ে সঙ্গীত চর্চা করতেন। মকরম শাহও বাবার মতই সঙ্গীত চর্চা শুরু করেন। সে সময় তিনি পিতৃব্য আজম শাহর দ্বারাও অনুপ্রাণিত হন। তিনি মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত হলেও সঙ্গীতের প্রতি গভীর মমতা নিয়ে ফকির জালাল খাঁর নিকট শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। একসময় তিনি নিজে গান লিখে, স্বকণ্ঠে গাওয়ার মধ্য দিয়ে সঙ্গীতে পথচলা শুরু করেন।
সুনামগঞ্জের মরমী সঙ্গীতের কীর্তিমান পুরুষ শাহ আব্দুল করিম, দুর্বীণ শাহ, কামাল পাশা, আসকর আলী মাস্টার, সফর আলী, সিদ্দেক আলী, মানউল্লাহ্ এবং ময়মনসিংহের সাত্তার মিয়া, ইদ্রিস আলী, আলী হোসেন ও তাহের কবি প্রমুখের সঙ্গে বহু আসরে একসঙ্গে গান পরিবেশন করেছেন মকরম শাহ। ভাটি অঞ্চলে কবিগানের জন্য বেশ জনপ্রিয় ছিলেন তিনি।
স্ত্রী রংমালা বিবির সঙ্গে মকরম শাহ’র সংসারে এক ছেলে ও চার মেয়ে। ছেলে শাহজাহান সিরাজ বাবার পথ অনুসরণ করে গান লেখেন এবং পরিবেশন করেন।
পঞ্চাশের দশকে ছয় বছর সৌদি আরব ছিলেন মকরম শাহ। তখন তিনি পবিত্র হজ পালন করেন। তিনি সিলেটি নাগরি ভাষায় বিশেষ পারদর্শী ছিলেন।
তার একমাত্র প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ ‘আসা যাওয়া বারণ হইল না’। তাছাড়াও তার অপ্রকাশিত বহু গান রয়েছে।
- প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত
- করিম ছিলেন মাটির মানুষ