বিবদমান দুইপক্ষের অভিন্নসুর/ বিবেধ ভুলে ঐক্যের তাগিদ

বিশেষ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় জেলায় সংগঠনের বিবদমান দুই গ্রুপের ছিল অভিন্নসুর। সকলেই বলেছেন, সম্মেলন সফল করতে হবে, সামনের জাতীয় নির্বাচনে দলকে ক্ষমতায় নেবার জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। সম্মেলনে কমপক্ষে ৫০ হাজার মানুষের জমায়েত ঘটাতে হবে। বর্ধিত সভায় অবশ্য প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুহিবুর রহমানের মানিক ও তাঁর ঘনিষ্ট সংসদ সদস্য ড. জয়া সেন গুপ্তা এবং দিরাই ও শাল্লা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন না।
মঙ্গলবার সুনামগঞ্জ শহরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরী মিলনায়তনে জেলা আওয়ামী লীগের এই বর্ধিত সভা হয়।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এনামুল কবির ইমনের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি নুরুল হুদা মুকুট, সহসভাপতি রেজাউল করিম শামীম, অ্যাড. অবনী মোহন দাস ও আবুল কাসেম, যুগ্ম সম্পাদক অ্যাড. নান্টু রায় ও অ্যাড. হায়দার চৌধুরী লিটন, সাংগঠনিক সম্পাদক শংকর দাস, সিরাজুর রহমান সিরাজ, জুনেদ আহমদ, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর চৌধুরী, সদস্য আবু সাদাত মোহাম্মদ লাহিন, সদস্য এবিএম ফললুল করিম, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবু সাদাত লাহীন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম, তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অমল কান্তি কর, ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ বিলকিস, ছাতক উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আজমল হোসেন সজল, দোয়ারাবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শামীমুল হক শামীম, জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রিজু, শান্তিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিধাংশু শেখর ধর, জামালগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী, বিশ^ম্ভরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম সিদ্দিকী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
দুপুর ১২ টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত দুইঘণ্টার সভায় জেলা আওয়ামী লীগের বিবদমান দুইপক্ষের মধ্যে হৃদ্যতা ছিল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। কেউ কারো সমালোচনা করেন নি। একজন অন্যজনকে খুশি করার চেষ্টা ছিল বক্তব্যজুড়ে।
শুরুতে ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ বিলকিস দলীয় প্রতিপক্ষকে সমালোচনা করে বক্তব্য দেওয়া শুরু করলে, সভাপতি মতিউর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার ইমন এবং সিনিয়র সহসভাপতি নুরুল হুদা মুকুট তাঁকে প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে সম্মেলন কিভাবে সফল করা যায়, পরামর্শমূলক বক্তব্য দেবার জন্য বলেন।
নিজে বক্তব্য দেবার সময় নুরুল হুদা মুকুট বলেন, দলের সহকর্মীর সমালোচনা করার সময় এখন নয়। সামনের দিন কঠিন দিন। সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে বিএনপি -জামায়াতকে মোকাবেলা করতে হবে। বড় দল গ্রুপিং থাকবে। দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা যাকে দায়িত্ব দেবেন, তাকে মেনে নিতে হবে। জেলার সকল আসনে দলীয় প্রার্থীর জয় নিশ্চিত করতে হবে। আগের বিরোধ ভুলে যেতে হবে। দলীয় প্রতিপক্ষ হিসাবে পরিচিত জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার ইমন ‘নান্দনিক সুনামগঞ্জের স্বপ্ন দেখান’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ব্যারিস্টার এনামুল কবির ইমন বক্তব্য দেবার সময় নুরুল হুদা মুকুটের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, বর্ধিত সভায় দলের যে ঐক্য দেখানো হয়েছে, তা কর্মীদের কর্মস্পৃহা বাড়াতে সাহায্য করবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান সভাপতির বক্তব্যে বলেন, বর্ধিত সভা সফল হয়েছে। রাজনৈতিক সচেতন জেলা সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে।
২০১৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি মতিউর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন। পরে ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছিল। দীর্ঘ এই আট বছরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এনামুল কবির ইমন ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি নুরুল হুদা মুকুটের পৃথক বলয় ছিল।
সম্প্রতি, জেলা পরিষদ নির্বাচনে ব্যারিস্টার ইমনের বড় ভাই খায়রুল কবির রুমেন দলের সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থী নুরুল হুদা মুকুটের সঙ্গে মাত্র আট ভোটে পরাজিত হন রুমেন। প্রায় চার মাসের ব্যবধানে মুকুট-ইমন একসঙ্গে স্বতস্ফুর্তভাবে আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা করলেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক বললেন, সংসদ চলমান থাকায় তারপক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের সভায় আসা সম্ভব হয় নি। ড. সেন গুপ্তা ফোন রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য জানা যায় নি।
শাল্লা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বললেন, তিনি আসার জন্য প্রস্ততি নিয়েছিলেন, পায়ে ব্যাথা পাওয়ায় আসতে পারেন নি। তাঁর ইউনিটের সভাপতি অসুস্থ্য বলে জানান তিনি। দিরাই আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ফোন না ধরায় বক্তব্য জানা যায় নি।