ভালোবাসাই বাঁচিয়ে রাখবে জয়ন্ত, আপনাকে

কর্মই মানুষকে দীর্ঘজীবী ও অমরত্ব দান করে। এসব কর্মিষ্ঠ মানুষের দীর্ঘদিন বেঁচে থাকা যেখানে মানুষের প্রশান্তির জন্য প্রয়োজন সেখানে এঁদের কেউ কেউ আমাদের শোকসাগরে ভাসিয়ে অকালে পরলোকে চলে যায়। দিরাই উপজেলার মতো এক নিভৃত স্থানে বসে একজন জয়ন্ত কুমার সরকার যেভাবে কলমকে অস্ত্র করে, নিজের সাংগঠনিক প্রতিভাকে পুঁজি করে, মানুষের ভালোবাসাকে সম্বল করে সর্বোপরি নিজের সদিচ্ছাকে অবলম্বন করে মানুষের জন্য, সমাজের জন্য, এলাকার জন্য কিছু করে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন তা এককথায় ছিল অতুলনীয়, অনুসরণীয় এবং স্মরণীয়। কিন্তু হায়! যৌবনের প্রান্তসীমাও ডিঙাতে পারেননি তিনি। সারাটি জীবন পড়ে ছিলো সৃজনশীল, কল্যাণধর্মী, মানবিক কাজ করার জন্য। মৃত্যু নামের স্বেচ্ছাচারী এক প্রপঞ্চ তাঁকে কেড়ে নিল অকালে। যখন জয়ন্ত নামক ফুলগাছ থেকে অজ¯্র পুষ্প ফুটতে শুরু করেছিলো তখনই নির্মম মৃত্যু সেই গাছটিকে উপড়ে ফেলল। জয়ন্ত মানুষের হৃদয়ে কতোটা জায়গা করে নিয়েছিলেন তা বুঝা গেছে, তাঁর মৃত্যুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ফেসবুকের নিউজফিডে অসংখ্য মানুষের শোকস্তবকে। এত শোক, কোনো সাধারণ মানুষের জন্য, আমরা দেখিনি বহুদিন। তিনি সাধারণ হয়েও যে অসাধারণ হয়ে উঠছিলেন এসব শোকস্তবক তার প্রমাণ। দুনিয়া থেকে চলে যাওয়া মানুষকে ফিরিয়ে আনার সাধ্য নেই কোনো মানুষের। কিন্তু আমরা তাঁর স্মৃতি রোমন্থন করতে পারি, তিনি কী করে গিয়েছেন স্বল্পায়ু জীবনে, তা পুনরায় পাঠ করতে পারি, তাঁর জীবনদর্শনকে শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে সে পথে হাঁটার চেষ্টা করতে পারি। মানুষ ও মানুষের সভ্যতার জন্য কাজ করে যাওয়া এক ব্যক্তির জন্য এটুকু করা মানবিকতারই অংশ। তাই আজ সর্বত্র মাতম উঠেছে জয়ন্তকে স্মরণ করে। আমরা মনে করি জয়ন্ত এখানেই সার্থক। তিনি সুবিধাবাদিতার চোরাবালিতে আটকে থাকেননি, স্তুতি আর বন্দনার কাঁচুমাচু জীবনকে বেছে নেননি। মাথা উঁচু করে নিজে যা ভালো মনে করেছেন তাই করে গেছেন মনের আনন্দে। জয়ন্তের জন্য প্রবহমান শোকনদীতে দৈনিক সুনামগঞ্জের খবরও আজ একবিন্দু অশ্রুফোঁটা রেখে গেলো। জয়ন্ত, আপনি আমাদের ভালোবাসায় অমর হয়ে থাকবেন।
কে ছিলেন এই জয়ন্ত? একজন মফস্বল সাংবাদিক। দৈনিক সুনামগঞ্জের খবর ও দৈনিক ভোরের কাগজের দিরাই প্রতিনিধি। কায়ক্লেশের জীবনে নিরাপোস জয়ন্ত সংবাদ সংগ্রহে সর্বদাই গণমানুষের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছেন। সাংবাদিকতা ছাড়াও তাঁর ছিল শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহ। তিনি একজন নিবেদিত সংস্কৃতি সংগঠক ছিলেন। ধামাইল গানের আরেক যুগ¯্রষ্টা প্রতাপ রঞ্জন সরকারের সৃষ্টিকে সকলের নিকট পরিচিত করে দেয়ার জন্য প্রতাপরঞ্জন ধামাইল উৎসবের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন। কালনির কূলে ও পিয়াইন নামে দুইটি ধামাইল দল গঠন করে তিনি সুনামগঞ্জের একান্ত নিজস্ব সংস্কৃতিÑ গানের একটি পৃথক ঘরানাÑ ধামাইলকে জনপ্রিয় করতে রেখেছেন অনবদ্য ভূমিকা। এসব কর্মকা- জয়ন্তকে অন্যরকম উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছিলো।
রবিবার সন্ধ্যায় দৈনিক সুনামগঞ্জের খবর কার্যালয়ে জয়ন্ত স্মরণ অনুষ্ঠান আয়োজন করে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। ওই সভায় সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে তাঁর পরিবারকে সহায়তা প্রদানের আহ্বান জানানো হয়েছে। আমরা জানি জয়ন্ত পরিবারের জন্য তেমন কিছুই রেখে যেতে পারেননি। তার স্ত্রী ও দুইটি অবোধ শিশু আজ অসহায়। এদের মুখের দিকে তাকিয়ে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাকে আজ মানবিক উদ্যোগ নিয়ে জয়ন্ত’র পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হবে। সমাজের জন্য কিছু করার জন্য যে জয়ন্ত সাধ্যমতো প্রয়াস করেছেন, আজ তিরোধানের পর সমাজকে অবশ্যই তাঁর পরিবারের পাশে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো উচিৎ। আমরাও সংশ্লিষ্টদের প্রতি এই আহ্বানে সাড়া দেয়ার অনুরোধ জানাই।