তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর বাংলাদেশের ভূমিকম্প ঝুঁকির বিষয়টি আবার গুরুত্বসহকারে আলোচনা শুরু হয়েছে। গত সোমবার শক্তিশালী এই ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় এ পর্যন্ত ৫ হাজার ব্যক্তির মৃত্যুর খবর মিলেছে। আশংকা করা হচ্ছে মৃতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। এই প্রেক্ষিতে ভূমিকম্প ঝুঁকি মোকাবিলার বিষয়টি বেশ জোরেশোরে আলোচনা হচ্ছে। বাংলাদেশও ভূমিকম্পের জন্য ঝুঁকিপ্রবণ একটি এলাকা। যদিও আমাদের জীবৎকালে কোনো প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পের দেখা মিলেনি তবু বিশেষজ্ঞদের আশংকা যেকোনো সময় এই অঞ্চলে ভূমিকম্পের ধ্বংসলীলা আঘাত করতে পারে। বিশেষ করে অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং বহুতল ভবন নির্মাণের কারণে ধ্বংসলীলা অনেক বেশি হতে পারে। তুরস্কে ভূমিকম্পের মাত্রা রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার কাছাকাছি ছিলো। বাংলাদেশে ৮ মাত্রার কাছাকাছি ভূমিকম্প হলে রাজধানী ঢাকার কী অবস্থা হতে পারে তা কল্পনাও করা যাবে না বলে বিশেষজ্ঞরা আশংকা জানিয়েছেন। এই অঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছিলো ১৮৯৭ সনের ১২ জুন। আসাম ও তৎকালীন বঙ্গে এর প্রভাব পড়েছিলো বেশি। এরপর থেকে খুব বড় মাত্রার ভূমিকম্প না হওয়ায় এ নিয়ে সতর্কতা গ্রহণে বেশ ঢিলেমি রয়েছে। এখন যত সুউচ্চ ভবন নির্মিত হচ্ছে সেগুলোকে ভূমিকম্প সহনীয় করতে তেমন মনযোগ দেয়া হয় না। এই অমনযোগিতার কারণে ক্ষতির মাত্রা অত্যধিক বাড়বে।
আমাদের সুনামগঞ্জের হাওর অঞ্চলসহ সিলেট বিভাগও উচ্চমাত্রার ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানা যায়। ভূতাত্ত্বিক কাঠামো অনুযায়ী বাংলাদেশ তিনটি প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত। এর দুইটি অর্থাৎ ইন্ডিয়া প্লেট ও বার্মা প্লেটের সংযোগস্থল সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ হয়ে মেঘনা দিয়ে বঙ্গোপসাগর হয়ে সুমাত্রা পর্যন্ত চলে গেছে। এই সময়ে এই প্লেটগুলোতে যে শক্তি সঞ্চিত আছে সেটি যদি একসঙ্গে বের হয় তাহলে ৮ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার (দৈনিক সমকাল, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩)। তিনি বলেছেন, আরও দু’টি বড় ধরনের ভূমিকম্পের উৎস বাংলাদেশের প্রান্তে অবস্থান করছে। একটা হচ্ছে ডাউকি ফল্ট অন্যটি চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায়। ডাউকি ফল্টটি ইতোমধ্যে ৫-৬ মিটার চ্যুতি ঘটানোর সক্ষমতা অর্জন করেছে বলে তিনি জানিয়েছেন। এর অর্থ হলে পূর্ণ শক্তি নিয়ে আঘাত হানলে কেন্দ্রে ভূমিকম্পের মাত্রা হতে পারে ৭ দশািমক ৫ থেকে ৮ রিখটার স্কেল। রাজধানী ঢাকা এই ফল্টের থেকে প্রায় দেড় শ’ কিলোমিটার দূরে। অর্থাৎ সিলেটে ভূমিকম্প হলে রাজধানীও ভয়ংকরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ থেকে বাংলাদেশের ভূমিকম্প ঝুঁকি বিষয়ে আমরা একটা পরিষ্কার ধারণা পাই। তাই এই ঝুঁকির বিষয়টি সবসময় মাথায় রেখে প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
বাংলাদেশে এখন যেসব সুউচ্চ ভবন নির্মাণ হয় সেগুলোর অধিকাংশই জলাশয় ভরাট করে করা হয়। এইসব ভবন নির্মাণকালে খরচ কমানোর জন্য বহু প্রাযুক্তিক করণীয়কে উপেক্ষা করা হয়। মাটি পরীক্ষা করে সক্ষমতা যাচাই করা হয় না। নকশা অনুসারে সঠিকভাবে ভবন তৈরি করা হচ্ছে কি-না তার তদারকি ব্যবস্থাও দুর্বল। রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে নির্মাণের কয়েক বছর পর কিছু বহুতল ভবন হেলে পড়ার কথা শোনা যায়। এগুলো আমাদের অবহেলা ও দুর্বলতার ফল। আমরা এমনভাবে ভবনগুলো নির্মাণ করি যে ভবনের আশপাশে কোনো খালি জায়গা থাকে না। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ভবনের মানুষগুলো যে কোথাও এসে দাঁড়াবে সে ব্যবস্থাও থাকে না কোথাও। বাংলাদেশে নির্মিত এখনকার ফ্লাট বা বহুতল ভবনগুলোকে এক কথায় মরণফাঁদ বলা হলে অত্যুক্তি করা হবে না।
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়ানক ভূমিকম্পে যে ভয়ঙ্কর মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে সেজন্য আমাদের গভীর সমবেদনা। এই বিপর্যয় দেখে দেশে প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একান্ত নিবেদন আমাদের।
- দোয়ারাবাজারে আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি সভা
- কমেছে পাশের হার বেড়েছে জিপিএ ৫