ভূমিহীন শত পরিবারকে উচ্ছেদের পাঁয়তারা

ধর্মপাশা প্রতিনিধি
মধ্যনগর উপজেলার চামরদানি ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামে দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে বসবাসকারী অন্তত ১০০ ভূমিহীন পরিবারকে উচ্ছেদের পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভূমিহীনদের পক্ষে একই গ্রামের রুখসানা বেগম নামে এক নারী গত রোববার জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিতভাবে এমন অভিযোগ করেছেন। এদিকে সোমবার সকালে ওই ভূমিহীনদের সাথে প্রতিপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে রেখা আক্তার নামে এক নারী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
চামরদানি ইউনিয়নের উত্তর দৌলতপুর মৌজার ১নং খাস খতিয়ানের ৯০ নং দাগে ১৮ একর ভূমি রয়েছে। যা প্রায় ৩০ বছর আগে একই ইউনিয়নের টেপিরকোনা ও বলরামপুর গ্রামের কয়েকজন বন্দোবস্ত নেন। কিন্তু স্থানীয় কিছু ভূমিহীন মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকায় চামরদানি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান খসরুজ্জামান বাবলু ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উদ্যোগে বন্দোবস্ত পাওয়া ব্যক্তিদের সাথে সমন্বয় করে ভূমিহীনদের সেখানে আশ্রয় দেওয়া হয়। তখন ভূমিহীনদের ১১ হাত করে আর বন্দোবস্তপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ২০ হাত করে জায়গা বুঝিয়ে দেওয়া হয় এবং সেই স্থানের নামকরণ হয় রসুলপুর। পরবর্তীতে ভূমিহীনরা সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। আর বন্দোবস্তপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে টেপিরকোনা গ্রামের রেখা আক্তারসহ কয়েকজন তাদের প্রাপ্ত ভূমির দখল ভূমিহীনদের কাছে বিক্রি করে দেয়। কিন্তু সম্প্রতি পুনরায় সেখানে দখলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন রেখা আক্তারসহ আরো কয়েকজন। আর এই চেষ্টায় বাবলু চেয়ারম্যানের ছোট ভাই উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি আসাদুজ্জামান রোকন ও বদরুজ্জামান মিলন ওই ভূমি নিজেদের দখলে নেওয়ার জন্য পেছন থেকে উসকানি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন রুখসানা বেগমসহ অন্যান্য ভূমিহীনরা। সপ্তাহখানেক আগে ওই দাগের একটি জায়গায় বদরুজ্জামান মিলন অ্যাক্সকেভেটর মেশিন দিয়ে মাটি খনন শুরু করলে ভূমিহীনরা বাঁধা দেয়। পরে গত সোমবার সকালে রেখা আক্তার তার লোকজন নিয়ে ওই জায়গায় গেলে উভয়পক্ষের মাঝে সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে রেখা আক্তার আহত হয়েছেন মর্মে মধ্যনগর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।
রসুলপুর গ্রামের ভূমিহীন মজিবুর রহমান বলেন, ‘৩০ বছর ধরে এখানে আছি। আমাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। ৯০ দাগের সামনের অংশ আমরা ধান মাড়াই, শুকানো থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করি। মিলন মাটি খনন শুরু করলে সে জানায় বন্দোপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে জায়গা কিনে রেখেছে। এতে বাধা দিলে মিলন বন্দোপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের এখানে পাঠায়।’
অভিযোগকারী রুখসানা বেগম বলেন, ‘রোকন ও মিলনের নির্দেশে তাদের পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এখানে এসে মাটি কাটা শুরু করে। এ নিয়ে ঝগড়া শুরু হয়। কিন্তু আমাদের পক্ষের লোকজন তাদেরকে কোনো আঘাত করেনি। মুখে মুখে গালিগালাজ করেছে। তারা নিজেরাই ব্ল্যাড দিয়ে হাত কেটে থানায় গিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করেছে।’
রসুলপুর গ্রামের ভূমিহীন গৃহবধূ আকলিমা বলেন, ‘এখান থেকে আমাদের উচ্ছেদ করে দিলে আমাদের রাস্তায় গিয়ে দাঁড়াতে হবে।’
আহত রেখা আক্তারের মেয়ে ঝর্ণা আক্তার বলেন, ‘গ্রামের মাতব্বরেরা যে জায়গা ভূমিহীনদের দিয়ে দিয়েছে সেখানে আমাদের কোনো দাবি নেই। আমাদের ঘর নাই বাড়ি নাই। আমরা সেই স্থানে ঘর তৈরি করতে চাই। আমার মাকে তারা মেরে হাত ভেঙে দিয়েছে।’
বদরুজ্জামান মিলন ওই স্থানে মাটি খনন করতে যায়নি জানিয়ে মধ্যনগর উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি আসাদুজ্জামান রোকন বলেন, ‘আমরা ওইখানে কোন মূলে যাবো? যাওয়ারতো প্রশ্নই আসে না। মানুষের আপদ বিপদ আসলে আমাদের কাছে বিচার দিলে আমরা লিগ্যালটা বলি। আমার বড় ভাই চেয়ারম্যান থাকাবস্থায় ভূমিহীনদের জায়গা করে দিয়ে গেছে। সেই জায়গা থেকে বন্দোবস্তপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা ভূমিহীনদের উচ্ছেদ করতে চায় না। কিন্তু বন্দোবস্তপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা অবশিষ্ট জায়গায় নিজেদের বসতি গড়তে চায়। আর এতে বাধা দেয় ভূমিহীনরা। এ নিয়ে বন্দোবস্তপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা আমাদের সহযোগিতা চাওয়ায় ভূমিহীনরা আমাদের বদনাম করছে।’
মধ্যনগর থানার ওসি জাহিদুল হক বলেন, ‘এ ব্যাপারে রেখা আক্তার থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’
মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ হাসান খান বলেন, ‘বন্দোবস্ত নেওয়া ভূমি হস্তান্তর বা বিক্রয়ের সুযোগ নেই। বিবদমান সমস্যা নিরসনে উভয়পক্ষকে নিয়ে শুনানীর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’