মসজিদে মুসল্লিকে মারপিট/ জামায়াতের ৫ নেতাকে আসামী করে মামলা

বিশেষ প্রতিনিধি
মসজিদে জামায়াত সমর্থকরা আওয়ামী লীগ সমর্থক মুসল্লিকে বেধরক মারপিট করার ঘটনায় ছাতকের গোবিন্দগঞ্জে উত্তেজনা বিরাজ করছে। মারপিঠের শিকার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাউসার আহমদ এই ঘটনায় জামায়াত নেতা আব্দুস সালাম মাদানীসহ পাঁচ জনকে আসামী করে ছাতক থানায় মামলা দায়ের করেছেন। বৃহস্পতিবার বিকালে পুলিশ এই মামলা নিয়েছে। আওয়ামী লীগ কর্মীকে মারপিঠের ঘটনায় গোবিন্দগঞ্জে উত্তেজনা বিরাজ করছে। রবিবার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ এই বিষয়ে করণীয় নির্ধারণের জন্য কর্মী সভা আহŸান করেছে।
গোবিন্দগঞ্জ আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতা কর্মী ও স্থানীয় একাধিক মুসুল্লিরা জানান, সিলেট জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য ও সুনামগঞ্জ-২ আসনে জামায়াতে ইসলামির প্রতীক দাঁড়িপাল্লার সাবেক মনোনীত প্রার্থী সিলেট বিভাগের অন্যতম শীর্ষ জামায়াত নেতা আব্দুস সালাম মাদানী ছাতক উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ ফজলিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ ও নতুনবাজার জামে মসজিদের খতিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। গত শুক্রবার নিয়মিত বয়ানে সরকারের শিক্ষানীতি নিয়ে কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘নাস্তিকরা নিয়ন্ত্রণ করছে শিক্ষা ব্যবস্থা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলের নাম হিন্দু সূর্যসেনের নামে নামকরণ করেছে সরকার’ এই বক্তব্যের পর গোবিন্দগঞ্জ- সৈদেরগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাউসার আহমদ প্রতিবাদ করেন।
মিম্বরে দাঁড়িয়ে মুসল্লিদের সামনে মিথ্যাচার ও বিভ্রান্তি না ছড়ানোর জন্য কাউসার অনুরোধ করলে তার উপর ক্ষিপ্ত হন আব্দুস সালাম মাদানী। নামাজ শেষে কাউসার বের হয়ে দেখেন নাশকতার মামলায় বিভিন্ন সময়ে জেলখাটা শিবির কর্মী মোক্তার হোসেন, আব্দুল মগনি, মতিউর রহমান, ইমন, যোবায়ের, হেলাল আহমদসহ কয়েকজন হকিস্টিক ও লাঠিসোটা নিয়ে তার দিকে তেড়ে আসছে। সশস্ত্র এই লোকদের দেখে তিনি আবারও মসজিদে প্রবেশ করেন। এই অবস্থায় অস্ত্রধারীরা মসজিদে প্রবেশ করে মাওলানা আব্দুস সালাম মাদানীর সামনে তাকে বেধড়ক মারধর করে।
মসজিদে উপস্থিত মুসল্লি মাওলানা আখতার হোসেন, স্থানীয় মুসল্লি সালেক আহমদ, শাহজাহান সিরাজ, কামরুল ইসলাম, ইউপি সদস্য সুরেতাজ মিয়া, আব্দুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন তাকে রক্ষা করার চেষ্টা করলেও তিন দফায় কাউসারকে মারধর করা হয়। এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার জামায়াতের মুক্তার মিয়া, মতিউর রহমান, মুজাহিদ মিয়া ও আব্দুল মগনিকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন কাউসার আহমদ।
কাউসার আহমদ এই প্রসঙ্গে বলেন, আমার বাড়ি মসজিদের পাশেই, আমি ওই মসজিদেই নিয়মিত নামাজ আদায় করি। আমার বাবা মরহুম ধরাছত আলী এই মসজিদে নামাজ আদায় করতেন। আমার বাবা মসজিদ কমিটির সদস্যও ছিলেন। জামায়াত নেতা আব্দুস সালাম মাদানী গোবিন্দগঞ্জ নতুনবাজার মসজিদের খতিব হিসেবে প্রতি শুক্রবার বয়ানে ধর্মীয় উস্কানী, অপপ্রচার ও সাম্প্রদায়িক কথাবার্তা বলে আসছেন। গোবিন্দগঞ্জ জামায়াতের ঘাঁটি ও রাজনৈতিক শক্তিশালী অবস্থানের কারণে তার ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে কেউ সাহস করে কথা বলতে পারে না। গত ২৭ জানুয়ারি জামায়াতের এই শীর্ষ নেতা আব্দুস সালাম মাদানী জুম্মার নামাজের আগে মিম্বরে দাঁড়িয়ে বরাবরের মতো বয়ান করছিলেন। বয়ানে তিনি এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগ সরকারের কঠোর সমালোচনা শুরু করে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার নাস্তিক মুরতাদ দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলের নাম হিন্দু সূর্যসেনের নামে নামকরণ করেছে। তার বক্তব্যে সাম্প্রদায়িক ও উস্কানীমূলক আরো অনেক কথাবার্তা ছিল। তিনি আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, এরা ডাকাত সন্ত্রাসী। আমি তখন প্রতিবাদ করি এবং তাঁকে ধর্মীয় বয়ান দেবার অনুরোধ জানাই। এরপর অন্য মুসল্লিরা আমাকে বসান এবং পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। পরে নামাজ আদায় করি। জামায়াত সমর্থকরা এসময় বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের সমর্থক জড়ো করে মসজিদের সামনে জড়ো করে। নামাজ শেষে বের হতেই তারা আমার উপর সশস্ত্র হামলা চালায়। আমি মসজিদের ভেতরে ঢুকার পরও তিনদফায় আমার উপর হামলা হয়। ঘটনা জানাজানি হলে আমাদের দলের নেতা কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। জ্যেষ্ঠ নেতারা পরিস্থিতি সামাল দেন। রবিবার এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জে সভা ডেকেছেন নেতারা, আমি থানায় মামলা দায়ের করেছি।
সৈদেরগাঁও- গোবিন্দগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক বললেন, ঘটনাটি আইনানুগভাবে নিস্পত্তির জন্য তাৎক্ষণিক কোন প্রতিবাদ কর্মসূচি দেওয়া হয় নি। রবিবার এই বিষয়ে করণিয় নির্ধারণের জন্য সভা ডাকা হয়েছে।
জামায়াত নেতা আব্দুস সালাম মাদানী বললেন, আমি ২৮ বছর ধরে মসজিদে বয়ান করছি। কেউ আমার দিকে চোখ তুলে কথা বলেনি। আমি ২৭ জানুয়ারি শুক্রবার শিক্ষানীতি নিয়ে বক্তব্য দিয়ে নৈতিক দায়িত্ব পালন করেছি। এসময় চোখ তুলে বেয়াদবি করে কাউসার। এই মসজিদে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা ফজলুর রহমানও নামাজ আদায় করেন। তিনিও কোন দিন আমার বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন নি। এখন তারা নানা কাহিনী সাজিয়েছে। আমার উপর মামলাও করেছে। এর বেশি আমি এখন কিছুই বলতে চাই না।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান বলেন, মসজিদের ভেতরে একজন মুসল্লিকে পেটানো হয়, মাদানী সাহেব বসে বসে দেখেন এই কী ধর্মীয় শিক্ষা দিচ্ছেন তিনি। তাঁর পেছনে জীবদ্দশায় তিনি আর কোন দিন এই মসজিদে নামাজ পড়বেন না বলেও জানান।
ছাতক থানার ওসি মাহবুবুর রহমান বলেন, মসজিদে মুসুল্লিকে পেটানোর ঘটনায় বৃহস্পতিবার আব্দুস সালাম মাদানীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। আমরা আসামী গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি।