মেয়াদ শেষের ২ বছরেও কাজ শেষ হয়নি

মধ্যনগর প্রতিনিধি
নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার মেয়াদ শেষ হয়েছে দুই বছর আগেই, তবুও কাজ শেষ হবার আলামত দেখা যাচ্ছে না। মধ্যনগরের গুরুত্বপূর্ণ দুই সেতুতে এমন শনির দশা লেগেছে । বাঁশের তৈরি চাটাইয়ের ওপর দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষজন ও যানবাহন চলাচল করছে। এ কারণে দীর্ঘদিন ধরে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ধর্মপাশা উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় ও স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, দরপত্রের মাধ্যমে মধ্যনগর উপজেলার সোমেশ্বরী নদী ও উবদাখালি নদীর উপর সেতু দুইটির নির্মাণ কাজ পায় তমা কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের (সিআইবিআরআর) আওতায় ২০১৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর উবদাখালী নদীর ওপর ৪৭ কোটি ৮২ লাখ ১৪ হাজার ৮০০ টাকা ব্যয়ে ৩২০ মিটার এবং সুমেশ্বরী (কায়েতকান্দার পিছগাঙ্গা) নদীর ওপর ৪১ কোটি ৭৫ লাখ ৯০ হাজার ২২১ টাকা ব্যয়ে ৩১০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করে তারা। ২০২১ সালে ৮ জুন উভয় সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত উবদাখালী সেতুর ৬০ ভাগ ও কায়েতকান্দা সেতুর ৪০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এতে করে উপজেলার লক্ষাধিক মানুষজনকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
উপজেলার বংশীকুন্ডা কলেজের প্রভাষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, সোমেশ্বরী ও উবদখালি নদীর উপর সেতু দুইটির নির্মাণ কাজে দীর্ঘসূত্রতায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নিতে আসা পরীক্ষার্থীদের। মধ্যনগর উপজেলায় ৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২টি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও একটি কলেজ রয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র উপজেলা সদর মধ্যনগরে হওয়ায় পরীক্ষার্থীদের অধিকাংশই দুই পাশের নদী পাড় হয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসতে হয়। প্রতিবছর মাধ্যমিকের প্রায় কমবেশি এক হাজার ও উচ্চ মাধ্যমিকের প্রায় ৪০০-৫০০ পরীক্ষার্থী পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।
উপজেলার বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরনবী তালুকদার বললেন, ২টি সেতুর নির্মাণ সম্পন্ন হলে উন্নয়নের মহাসোপানে যুক্ত হবে নবগঠিত মধ্যনগর উপজেলা। জেলার সীমান্ত এলাকা মহিষখলা, টেকেরঘাট, যাদুকাটা, লাউড়েরগড় হয়ে সুনামগঞ্জ জেলা শহরের সঙ্গে ধর্মপাশা, মধ্যনগর ও তাহিরপুর উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার স্বপ্নপূরণ হবে। কিন্তু নির্মাণ কাজের ধীর গতির কারণে সবাই দুর্ভোগের শিকার হচ্ছি।
উপজেলার সীমান্তবর্তী লক্ষীপুর গ্রামের বাসিন্দা হাজং শ্রী দশরথ অধিকারী বলেন, মধ্যনগর বাজার এখন শুধু মাত্র ব্যবসাকেন্দ্র নয়, উপজেলার প্রশাসনিক কেন্দ্রও বটে। এজন্য সারা উপজেলার মানুষের প্রশাসনিক সেবা প্রাপ্তি সহজ ও চলাচল ঝুঁকিমুক্ত করতে সেতু দুটির নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করা উচিত।
মোটরসাইকেল চালক এনামুল হক বলেন, প্রতিদিন আমরা সোমেশ্বরী নদীর বাঁশের চাটাই দিয়ে ও উবদাখালি নদীর গোদারা ঘাটের খাড়া সিঁড়ি দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উঠানামা করছি। অচিরেই সেতু দুইটির নির্মাণ কাজ শেষ করে জনচলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার দাবি জানাই।
মধ্যনগর ও ধর্মপাশা উপজেলায় কর্মরত এলজিইডি’র উপজেলা প্রকৌশলী শাহাব উদ্দিন বলেন, আগের চেয়ে এখন কাজের গতি বেড়েছে। আশা করি আগামী একবছরের মধ্যে সেতু দুইটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে।
মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ হাসান খান বলেন, জনস্বার্থে সেতু দুইটির নির্মাণের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলা হবে।