যৌথ উদ্যোগে রাস্তা ও খাল খনন, খুশি কৃষক

মো: ওয়ালী উল্লাহ সরকার, জামালগঞ্জ
জামালগঞ্জে রাইঙ্গার হাওর থেকে বোর ধান আনার সুবিধার জন্য তিন কিলোমিটার রাস্তা তৈরি ও খাল খনন করা হয়েছে। এখন উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের লম্বাবাক থেকে পাইট্রা দার হয়ে হাওর থেকে ঠেলাগাড়ি, ট্রলী অথবা নৌকাযোগেও ধান আনতে পারবেন কৃষকরা। এতে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।
জানা যায়, রাইঙ্গার হাওরে প্রায় পাঁচশত হেক্টর জমিতে বোর চাষ করেন লম্বাবাক, পূর্বলম্বাবাক, পশ্চিম লম্বাবাক, কালীপুর, ধানুয়াখালী, গ্রামের কৃষকরা। আশেপাশে পানি না থাকায় ফাল্গুন, চৈত্র মাসের শেষের দিকে বৃষ্টির জন্য কৃষকদের অপেক্ষা করতে হয়। আবার বৈশাখে ঝড়বৃষ্টিতে তাদের কষ্টার্জিত ফসল বাড়িতে আনতে বেগ পেতে হয়। প্রায় একযুগ ধরে এই দুর্ভোগের কথা বিভিন্ন মহলে জানালেও কোন প্রতিকার হয়নি। বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান মো. হানিফ মিয়া, তার বড় ভাই শিল্পপতি মনির হোসেন ও গ্রামবাসির আর্থিক সহায়তায় তিন কিলোমিটার রাস্তা ও সাথে খাল খনন করা হয়েছে। এই রাস্তা দিয়ে খুব সহজেই রাইঙ্গার হাওর থেকে কৃষকরা তাদের জমির ধান বাড়িতে নিয়ে আসতে পারবেন।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এখন আর জমিতে পানি দিতে বৃষ্টির অপেক্ষা করতে হবে না। খাল খননের ফলে পর্যাপ্ত পরিমান পানির ব্যবস্থা হয়েছে। ফলে কৃষকরা সহজেই জমিতে পানি দিতে পারবেন। খান খননের মাটি দিয়ে রাস্তা তৈরী হওয়ায় চলতি মৌসুমে বৈশাখ মাসে জমি থেকে ধান কেটে সহজেই কৃষকেরা ঠেলাগাড়ি ও ট্রলী দিয়ে বাড়িতে ধান নিয়ে আসতে পারবে।
লম্বাবাক গ্রামের কৃষক ছবর আলী বলেন, রাস্তা করতে গিয়ে এস্ককেভেটর দিয়ে মাটি কেটে আমাদের খালও খনন হয়ে গেল। রাস্তার সাথে খাল খনন হওয়ায় আমরা গাড়িতে কিংবা নৌকায় দুটো দিয়েই ধান বাড়িতে আনতে পারবো। প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ না হলে এবার ধানের বাম্পার ফলন হবে।
ইউপি সদস্য মো. মোর্শারফ হোসেন বলেন, এই প্রকল্পে এক সাথে দুটো কাজ হয়েছে। একদিকে হাওরের রাস্তা অপরদিকে খাল খনন। আগে হাওরের ধান শ্রমিকরা কাঁধে করে আনতেন। এখন আমরা ঠেলাগাড়ি, ট্রলি এবং খাল দিয়ে ছোট ছোট নৌকায় ধান আনতে পারবো।
তিনি আরও বলেন, খাল খননের আগে নদী থেকে অনেক টাকা ব্যায়ে জমিতে পানি দেওয়া হতো। এখন আমরা খাল থেকেই কম খরচে পানি দিতে পারবো।
জামালগঞ্জ উত্তর ইউপি চেয়ারম্যান মো. হানিফ মিয়া বলেন, দীর্ঘদিন ধরে লম্বাবাক ও তার আশপাশের ৫টি গ্রামের কৃষকেরা জমির ফসল নিয়ে বাড়িতে আসতে পারতো না। পাশাপাশি ধান বের হওয়ার সময় পানির অভাবে অধিকাংশ ধানেই চিটা হতো। এই বিষয়ে ৫ গ্রামের লোকজন ইউনিয়ন পরিষদের সহযোগিতা চাইলে আমার ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ৩ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা ও আমার বড় ভাই মনির হোসেন দুই লক্ষ টাকা ও গ্রামবাসী মিলে দুইলক্ষ টাকায় যৌথ উদ্যোগে তিন কি: মি: রাস্তা তৈরি ও খাল খনন করা হয়েছে। এতে করে হাওরের ধান বাড়িতে আনতে এবং খরা মৌসুমে খাল থেকে সহজেই পানি দিতে পারবেন কৃষকরা। আগামীতে এই খালে যৌথ উদ্যোগে মৎস্য চাষের ব্যবস্থা করা হবে।