বিদেশে মৃত্যু থামছেই না। নিজের ভাগ্য গড়া ও পরিবারের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য যে তরুণ যুবকরা অজানা বিদেশের অচেনা পরিবেশে নিজেদের অনেক ঝুঁকি নিয়ে ঠেলে দিচ্ছেন তাদের একটি অংশের দুর্বিপাকে প্রাণ যাচ্ছে নিয়মিত। সর্বশেষ এ তালিকায় যুক্ত হলেন জগন্নাথপুর উপজেলার পাটলি ইউনিয়নের বনগাঁওয়ের যুবক সাহাদ আলী। গতকাল দৈনিক সুনামগঞ্জের খবরে প্রকাশিত একটি সংবাদ থেকে জানা যায়, দালালের মাধ্যমে ওই যুবক ৯ মাস আগে লিবিয়া পাড়ি জমিয়েছিলেন। পৈত্রিক জমি বিক্রি করে চার লাখ টাকা খরচ করতে হয়েছিল এজন্য তাকে। লিবিয়াতে যাওয়ার পর আরেক অপরাধীচক্রের খপ্পরে পড়েন সাহাদ আলী। লিবিয়ায় থাকতে সেখানে অবস্থানরত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সাদ্দাম নামে এক অপরাধীর সাথে পরিচয় হয় সাহাদের। ওই সাদ্দামই নাকি তাকে মাফিয়াচক্রের হাতে তুলে দেয়। পরে সাহাদের পরিবারের কাছে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে ওই চক্র। সাহাদের বোন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, অপহরণকারীদের সাথে বারবার তাদের মুঠোফোনে কথা হয়েছে। তারা ভাইকে মুক্তি দিতে অনেক কাকুতি মিনতি করেছেন। দিয়েছেন কিছু টাকাও। কিন্তু অপহরণকারীরা তার ভাইকে মুক্তি না দিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করেছে, রেখেছে উপোস। এই নির্যাতনের কারণেই মৃত্যু ঘটেছে সাহাদের। স্থানীয় এলাকাবাসীরা চাঁদা তুলে মুক্তিপণের জন্য দেড় লাখ টাকা পাঠিয়েছিলেন। কোনো কিছুই সাহাদকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে পারেনি।
অপহরণকারী বা প্রতারক চক্রের এমন কা- ছাড়াও অবৈধভাবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার পথে জলপথে বহু তরুণের মৃত্যু ঘটে। দালালরা দেশে থাকতে এদের প্রলোভিত করে সহজেই নির্দিষ্ট দেশে পৌঁছে দেয়ার। কিন্তু দেশ ছাড়ার পর নির্মম বাস্তবতার সম্মুখীন হন এই তরুণরা। তখন আর দেশে ফিরে আসারও কোনো পথ থাকে না। পরিবার সর্বস্ব বিক্রি করে তাদের বিদেশ পাঠিয়েছে। এখন কোন্ মুখে তারা আবার দেশে ফিরে আসবে, এই আত্মপীড়নে এরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাক্সিক্ষত দেশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে। পথে কিছু মরে কিছু পৌঁছতে পারে। এমন এক অমানবিক অবস্থার ভিতর দিয়ে চলছে আমাদের রেমিটেন্স আহরণের বিপজ্জনক পথটি।
দেশে কর্মসংস্থান নেই, প্রচুর তরুণ ও যুবক দেশে বসে বেকার জীবন যাপন করছে। এরা স্বপ্ন দেখে বিদেশে গিয়ে স্বচ্ছলতা আনার। দেশের জাতীয় নীতিমালা এই স্বপ্নকে সমর্থন করে। কিন্তু জাতীয়ভাবে এদের বিদেশ যাত্রার নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধান করা হয় না। কতিপয় লোভী দালাল ও মানবপাচার চক্রের হাতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে এই খাতের অধিকাংশ। গ্রামে গ্রামে দালালরা ঘুরে বেড়ায় আর প্রলোভনের জালে ফেলে বেকার তরুণদের। অথচ সরকার ইচ্ছা করলে এই বিদেশগামী তরুণদের দায়িত্ব নিজের হাতে রাখতে পারে। নিতে পারে নিরাপদ অভিবাসনের সুব্যবস্থা। কিন্তু কোথায় কী? সবকিছুকেই আজ কতিপয় অসৎ ব্যবসায়ীর হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। যাদের কারণে বিদেশে মৃত্যু ঘটছে দেশে তাদের কোনো জবাবদিহিতা করতে হয় না, এদের সাজা হয়েছে এমন খবরও কখনও আমরা শুনি না। অথচ আমাদের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে এই প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের উপরই। যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, পরিবার পরিজন থেকে হাজার মাইল দূরে থেকে দেশের অর্থনীতিকে পুষ্ঠ করে চলেছে তারাই সবচাইতে অনিরাপদ, অবহেলিত। এই অবস্থার পরিবর্তন হওয়া আশু বাঞ্ছনীয়।
সাহাদের করুণ ও অসহায় মৃত্যুবরণ আমাদের নীতিমালার যে বিবর্ণ ও অমানবিক চেহারা সামনে নিয়ে এসেছে তাকে উপেক্ষা করার কোনো উপায় নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানসহ প্রবাসী ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব এই মৃত্যুর ঘটনাটি খতিয়ে দেখা এবং দোষীদের সাজা নিশ্চিত করা। পাশাপাশি সাহাদের পরিবারের পাশে এসে সহায়তার হাত নিয়ে দাঁড়াতে হবে রাষ্ট্রকে। মনে রাখতে হবে এই সাহাদের মতো তরুণ যুবকরাই সবচাইতে শক্ত অর্থনৈতিক স্তম্ভ এ দেশের।
- জগন্নাথপুরে কোন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি/ গতকাল শুরু হয়েছে এক প্রকল্পের কাজ
- স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে