ল্যাপটপ বিতরণের ভুয়া তথ্য/ প্রতারণা সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারণা দরকার

২০২৩ সনে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে ৯ লাখ ৬০ হাজার ল্যাপটপ বিতরণ করার একটি প্রতারণাপূর্ণ ও ভুয়া প্রচারণা অনলাইনে চালানো হচ্ছে বলে ৭ মার্চ দৈনিক সুনামগঞ্জের খবরে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী অনেকেই এই প্রতারণাপূর্ণ তথ্যটি না বুঝে শেয়ার করছেন। এতে সাধারণ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের বিভ্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ ধরনের কর্মকা- থেকে বিরত ও সতর্ক থাকার জন্য সরকারি দায়িত্বশীল মহল থেকে সকলকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) দৈনিক সুনামগঞ্জের খবরকে বলেছেন, বিনামূল্যে ল্যাপটপ বিতরণের কোনো তথ্য তাঁদের কাছে নেই। এই ধরনের প্রচারণা ভুয়া ও গুজব। আমাদের দেশে বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের গুজব ও মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে মানুষ ঠকানোর সুপরিকল্পিত আয়োজন দেখা যায়। এইসব চাতুর্যপূর্ণ প্রচারণার কারণে বহু লোক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন। সাধারণত প্রথম পর্যায়ে এই প্রতারণার বিষয়টি সহজ সরল মানুষ ধরতে পারেন না। তারা অবলীলায় প্রতারণার ফাঁদে ধরা দেন এবং একসময় বুঝতে পারেন তারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন। কিন্তু তখন আর করার কিছু থাকে না। সমস্যা হচ্ছে আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কখনও আগ বাড়িয়ে এমন প্রতারণাকা- সম্পর্কে তেমন সচেতন থাকে না। বহু লোক প্রতারিত হওয়ার পর তাদের কানে সংবাদ পৌঁছায় এবং তখন তারা কিছু ব্যবস্থা গ্রহণের দিকে এগিয়ে থাকে। অথচ রাষ্ট্রের কোথায় কখন কী ঘটছে তার খবর সংগ্রহের জন্য সরকারের বহু প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এতসব প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব থাকার পরও এসব প্রতারণাকা- সম্পর্কে পূর্বসতর্কতা না থাকার কারণে ঠকবাজ ধান্দাবাজরা কিছুদিন বহাল তবিয়তে নিজেদের অপকর্ম চালিয়ে যেতে সমর্থ হয়। আলোচ্য ল্যাপটপ প্রতারণা বিষয়ে তাই আগে থেকেই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আমরা আহ্বান জানাই।
ল্যাপটপ বিতরণের প্রক্রিয়ার সাথে যেহেতু সরাসরি শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক সেহেতু এ ব্যাপারে তাদের বিশেষভাবে সতর্ক করতে হবে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ বিষয়ে প্রচারণা চালাতে হবে। আমাদের বিশ্বাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কাছে এই তথ্য পৌঁছে গেলে প্রতারকরা খুব বেশি সুবিধা করতে পারবে না। কাজটি খুব কঠিন নয়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত একটি বার্তা সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে দিলে অল্প সময়েই সকল শিক্ষার্থী বিষয়টি জেনে যাবেন। এছাড়া যারা অনলাইনে ফেসবুক সহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেন তাদেরও দায়িত্বশীল হতে হবে। কোনো কিছু না বুঝে অতিরিক্ত আবেগের বশে অতি উৎসাহী হয়ে প্রচার করা ঠিক নয়। এই ধরনের অপরিনামদর্শী কাজ প্রতারণাকাজে সহযোগিতার নামান্তর। সুতরাং ফেসবুক ব্যবহারে আরও সাবধানী হতে হবে। আলোচ্য ল্যাপটপ বিতরণের প্রতারণাপূর্ণ প্রচারে যেসব চাতুর্যপনা রয়েছে সে সম্পর্কে সচেতন ব্যক্তিদের পাল্টা প্রচারণা চালু থাকলে সাধারণ মানুষ সহজেই বুঝতে পারবেন।
এইসব প্রতারণার সাথে জড়িতদের খোঁজে বের করতে হবে সরকারকে। প্রতারকচক্রকে আইনের জালে আটকাতে না পারলে এদের দাপট বাড়তেই থাকবে আর নানা কায়দায় লোক ঠকানোর কাজ চালাতেই থাকবে। ডিজিটাল প্রতারণাকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায়ই চিহ্নিত করা যায়। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সেই ধরনের সক্ষমতা আছে। এই সক্ষমতাকে কাজে লাগাতে হবে। সকল শিক্ষকদের নিকট আমাদের অনুরোধ, এরকম অপতৎপরতা সম্পর্কে আপনারা শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের সচেতন করুন এবং এই ফাঁদে যাতে কেউ পা না দেয় তা নিশ্চিত করুন। শুধু ল্যাপটপ প্রতারণা নয় বরং নানা নামে ও কায়দায় প্রতিদিন এরকম যত অপরাধকর্ম চলছে তার সবগুলোকে দমন, নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিহত করা হোক এই আমাদের কামনা।