হিন্দু ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠীর প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজা শুরু হতে আর বেশি দেরি নেই। প্রকৃতিতে শরৎ এর নির্মল ভাব এখনও প্রকটিত না হলেও পূজা আয়োজনের পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। বারোয়ারি ও ব্যক্তিগত মণ্ডপ মিলিয়ে এবার জেলায় মোট ৪৩২ টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এই ধর্মীয় উৎসবটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন করার জন্য প্রশাসন ও পূজা উদযাপন পরিষদ ইতোমধ্যে বেশকিছু মতবিনিময় সভা করেছে এবং এসব সভায় পূজারীদের উদ্দেশ্যে বেশ কিছু পরামর্শ/নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পূজামণ্ডপগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা বিধানের আশ্বাস প্রদান করে সরকারি নীতি অনুসারে আলোকসজ্জ্বা কমানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া শুক্রবার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সকল উপজেলা প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি মতবিনিময় সভা করেছে যেখানে সাত্ত্বিকভাবে পূজা উদযাপন ও উচ্চস্বরে বিভাষী গান-বাজনা পরিহার করতে পূজা কমিটিগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। পূজা উদযাপন পরিষদের ওই সভায় বলা হয়েছে, ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ভাবগাম্ভীর্য রক্ষা করতে হবে এবং সেখানে উচ্চস্বরের গানের পরিবর্তে ভক্তিমূলক গান বা রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করা যেতে পারে।
ধর্মীয় উৎসবকে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ রাখা ধর্মানুরাগীদের মনের একান্ত বাসনা। কিন্তু পরিতাপের সাথে লক্ষ্য করা যায়, বিভিন্ন পূজামণ্ডপে এই ভাবগাম্ভীর্য বজায় রাখা হয় না। ধর্মীয় পবিত্র পরিবেশ বজায় রাখার পরিবর্তে উন্মাতাল সুর ও শব্দের হিন্দি ও ইংরেজি গান পরিবেশন, নাচ ইত্যাদির ব্যবস্থা করে পূজামণ্ডপগুলোর পবিত্রতা নষ্ট করা হয়। এছাড়াও অভিযোগ আছে, কিছুক্ষেত্রে উশৃঙ্খল প্রকৃতির কিছু ব্যক্তি নেশাদ্রব্য গ্রহণ করে পূজার ছন্দ পতন করতে ভূমিকা রাখেন। এসব কর্মকাণ্ড মূলত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা আয়োজনের মূল উদ্দেশ্যকে পণ্ড করে দেয় এবং অন্যদের কাছে হেয় হতে হয়। তাই যথাযথভাবেই পূজা উদযাপন পরিষদ সাত্ত্বিক পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। আমরা তাদের আহ্বানের সাথে একমত পোষণ করি। বিদ্যুৎ ঘাটতির এই সময়ে মণ্ডপে অতিরিক্ত আলোকসজ্জ্বা করে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার একদিকে সরকারের নীতির সাথে অসংগতিপূর্ণ অন্যদিকে এই ধরনের আলোকসজ্জ্বা বেশ ব্যয়সাধ্যও বটে। তাই প্রশাসনের আহ্বান মতে আলোকসজ্জ্বার ক্ষেত্রেও কৃচ্ছতা সাধন করা দরকার।
এক একটি দুর্গোৎসবে আলোসজ্জ্বা, ডিজে গান-বাজনা, মণ্ডপ তৈরি, প্রতিমা নির্মাণে প্রচুর অর্থ ব্যয় করা হয়। অথচ বাহুল্য খরচ কমিয়ে এই অর্থ জনহিতকর কাজে ব্যয় করা হলে পূজা কমিটিগুলোর গ্রহণযোগ্যতা যেমন বাড়ে তেমনি এসব সামাজিক কর্মকাণ্ডের ফলে বেশ কিছু মানুষও উপকৃত হয়। ধর্মীয় বাণীতে আছে ‘জীবে সেবিছে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর’। অর্থাৎ চোখের সামনে যে আর্তপীড়িত দরিদ্র মানবগোষ্ঠীর অবস্থান তাঁদের কল্যাণে কোনো কাজ করা হলে তা ঈশ্বর সেবারই নামান্তর। পূজা কমিটিগুলো অসহায়, আর্ত ও পীড়িত মানুষের কল্যাণে নিজেদের বাজেটের একটি অংশ খরচ করে মানবসেবার পাশাপাশি সনাতন ধর্মের যে মহান রূপ সেটিও সকলের সামনে তুলে ধরতে পারেন। যেকোনো ধর্মীয় উৎসবের মাধ্যমে ওই ধর্মের দর্শন ও স্বরূপ অন্যদের মধ্যে প্রকাশ করা হয়। আমরা আজ যেভাবে শারদীয় দুর্গোৎসব পালন করছি তাতে ওই উদ্দেশ্য কতটুকু সাধিত হয় সেই আত্মজিজ্ঞাসা করার সময় এসেছে। পূজা উদযাপন পরিষদের বক্তব্যের অন্তনির্হিত মূল সুরও তাই বলে আমরা মনে করি।
পূজামণ্ডপ ও সার্বিকভাবে পূজার দিনগুলো আনন্দঘন, পবিত্রতায় পরিপূর্ণ ও শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপিত হোক এই আমাদের কামনা। আনন্দের এই ধর্মীয় উৎসবটি যাতে কোনো কুচক্রী মহলের কারণে নিরানন্দের উপলক্ষ না হয় সেটি নিশ্চিত করার জন্য আমরা প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাই।
- এক সপ্তাহের মধ্যেই জটিলতা নিরসন করা হবে, আশ্বাস বিআইডব্লিইটিএ’র
- লিডারগিরি করার জন্য জনপ্রতিনিধি হইনি- পরিকল্পনামন্ত্রী