যাতায়াতের জন্য দুর্গম এক উপজেলার নাম শাল্লা। হাওরবেষ্টিত এই উপজেলার সাথে পার্শ্ববর্তী উপজেলা কিংবা জেলার কোনো সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিলো না কোনো কালে। বর্ষায় নাও আর হেমন্তে পাওÑ এই ছিলো শাল্লাবাসীর মান্ধাতা আমলের যোগাযোগ মাধ্যম। যখন নানা জায়গায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগা শুরু হলো, যখন দুর্গম জনবসতিগুলোও সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্কে যুক্ত হতে শুরু করলো; সেই তখন থেকে শাল্লাবাসী স্বপ্ন দেখে আসছেন তাঁরা গাড়িতে চড়ে চলে আসবেন জেলা সুনামগঞ্জ বা অপরদিকে আজমিরীগঞ্জ হয়ে রাজধানী ঢাকায়। ২০১০ সনে জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত যখন দিরাই-শাল্লার সংসদ সদস্য; তখন একবার তাঁদের স্বপ্ন পূরণের দ্বার উন্মোচিত হয়েছিলো। ২০১১ সন থেকে কাজ শুরু হয় শাল্লা-দিরাই সড়কের। বেশ কিছুদূর অগ্রসর হওয়ার পর ওই কাজ মন্থর হতে হতে একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। তখন পর্যন্ত ওই কাজে ৯২ কোটি টাকা খরচ হয়ে গিয়েছিল। কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাওরের পানিতে ভেসে যায় শাল্লার দুই লাখ মানুষের সহজ যাতায়াতের স্বপ্ন। ২০১১ সনে শুরু হওয়া কাজ শেষ না হওয়ায় যেটুকো কাজ হয়েছিলো তাও বিনষ্ট হয়ে সরকারি টাকার শ্রাদ্ধ সম্পন্ন করে। এ দেশের সরকারি কাজের টাকা নাকি আকাশে উড়ে। তাই বহু টাকা খরচ হওয়ার পরও পরিত্যক্ত হওয়ার কারণে সৃষ্ট বিশাল অপচয় নিয়ে এ দেশে কোনো কথা হয় না। কেনই বা কাজ শুরু করা হলো আবার কেনই বা সেই কাজ মাঝপথে বন্ধ করে টাকার আদ্যশ্রাদ্ধ করা হলো সেই জবাবদিহিতার সংস্কৃতিই গড়ে উঠেনি। সুতরাং আগের অপচয় নিয়ে কথা নেই। এবার আবারও নতুন প্রকল্প প্রণীত হয়েছে। দরপত্র আহ্বান শেষ। এবারকার বরাদ্দ ৫২৫ কোটি টাকা। গতকাল এ সংক্রান্ত দৈনিক সুনামগঞ্জের খবরে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায় নতুন পর্যায়ের এই কাজ শুরু হবে আগামী এপ্রিল মাস থেকে। আপাতত কাজ শেষ করার জন্য দুই বছর মেয়াদ নির্ধারিত হয়েছে। তবে আমাদের অভিজ্ঞতা বলে এই কাজ দুই বছরে শেষ হবে না। দুই বছরের কাজটি যদি চার বছরেও শেষ করা যায় তাতেই সকলে খুশি থাকবেন। তবে আবারও যদি মাঝপথে কাজ বন্ধ হয়ে পড়ে তাহলে দুঃখের অন্ত থাকবে না।
শাল্লাবাসীর যোগাযোগ দুঃখ ঘোচাতে নতুন করে বিশাল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ ও কাজ শুরুর প্রক্রিয়া প্রায় সমাপ্ত করায় আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সড়ক ও সেতুমন্ত্রীসহ স্থানীয় সংসদ সদস্যকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। সরকারের মেয়াদ প্রায় শেষ হওয়ার পথে। তাই আশা করা যায় প্রতিশ্রুতি মত এপ্রিলেই হয়তো কাজ শুরু হবে। কাজটি শুরু হওয়ার পর যাতে আর কোনো কারণে বন্ধ না হয় সেই নিশ্চয়তা চাই আমরা। কারণ উন্নয়ন কাজে ব্যয়িত প্রতিটি টাকারই অংশীদার এই দেশের জনগণ। কোনো অবস্থাতেই যাতে সরকারি টাকা অপব্যয়ে পর্যবসিত না হয় সেই ব্যবস্থা রাখা দরকার সর্বাগ্রে। আমরা এই সড়কের কাজ পুনরায় শুরু হওয়ায় যারপরনেই খুশি। খুশি শাল্লাবাসী। সেই খুশি তখনই সার্থক হবে যখন শাল্লার মানুষ গাড়িতে চড়ে অল্প সময়ে সুনামগঞ্জে চলে আসতে সক্ষম হবেন। এই সরকারের আমলে বহু বড় বড় উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়িত হয়েছে। তাই সকলের আস্থা ও বিশ্বাসের ভিতও এবার পাকাপোক্ত। শাল্লাকে সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্কে যুক্ত করা গেলে সেখানকার উৎপাদন ও অর্থনীতিতে যে ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করবে তা দেশের সার্বিক উন্নয়নকেই তরান্বিত করবে। তাই এলাকা বিশেষের উন্নয়নকে এই সরকার জাতীয় উন্নয়নের অংশ হিসাবেই মনে করেন। গণমুখী এই দর্শনের উপরই মূলত যাবতীয় আশা ও ভরসা।
শাল্লাবাসীর যোগাযোগ দুর্গমতার অবসান ঘটুক। নির্ধারিত কাজটি মান ঠিক রেখে যথাসময়ে সমাপ্ত হোক এই আমাদের কামনা।
- শাল্লায় সাংসদ ড. জয়া সেনগুপ্তা/ বাঁধ নিয়ে অপপ্রচার হচ্ছে
- যাদুকাটা ইজারায় অনিশ্চয়তা/ কার্যক্রম স্থগিত রাখতে আদালতের আদেশ