শিমুলের রক্তিম আভা রাঙায় সবার মন

আমিনুল ইসলাম, তাহিরপুর
‘আকাশে বহিছে প্রেম, নয়নে লাগিল নেশা/কারা যে ডাকিল পিছে! বসন্ত এসে গেছে’ গানে গানে এবার বসন্ত এলেও, প্রকৃতিতে বসন্ত আসে গাছে গাছে নতুন পাতা, আমের মুকুল আর রক্ত রাঙা পলাশের ভর করে। কোকিলের কুহুতানে প্রাণে প্রাণে রঙ ছড়িয়ে। তাই তো যাদুকাটা নদী তীরে রক্তিম শিমুলের অরণ্যে যেন বসন্ত উৎসব শুরু করেছে। আর দেশের নানা প্রান্ত থেকে মানুষজন ছুটে যাচ্ছেন সেখানে।
তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নে মানিগাঁও গ্রামে ‘জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগানের’ শিমুল গাছগুলোয় ফুটে থাকা শিমুলের লাল পাপড়ির মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হবেন না এমন ব্যক্তি খুঁজে পওয়া খুবই দুষ্কর।
বর্ষায় সারিবদ্ধ শিমুল বাগানে সবুজ পাতার সুনিবিড় ছায়া যেমন পর্যটকদের দিনের ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয়, তেমনি বসন্তে ডালে ডালে ফুটে থাকা লাল ফুল আন্দোলিত করে, রাঙিয়ে দেয় দর্শনার্থীদের মন। তাইতো এ ফুলের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে প্রতিদিন যাদুকাটার তীরে ভিড় জমান শত শত পর্যটক। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকেই গাছে গাছে ফুল ফুটতে শুরু করে আর তা গড়ে ২০ থেকে ২৫ দিন থাকে। এ বছর শীতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকেই শিমুল ফুল ফুটতে শুরু করেছে। যাদুকাটা নদীর তীরে মানিগাঁও গ্রামে দেশের সবচেয়ে বড় শিমুল বাগান।
সম্প্রতি শিমুল বাগান ঘুরতে এসেছেন ফটোগ্রাফার মিজানুর রহমান। তিনি জানান, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কিছু শিমুল গাছ থাকলেও এক সাথে এত গাছ, এত ফুলের দেখা কোথাও মেলেনি, তাই শুধু মাত্র একসাথে এত ফুল দেখতে তিনি শিমুল বাগানে এসেছেন।
ময়মনসিংহ আকুয়া মোরলপাড়া থেকে আসা পর্যটক রিমন আহমেদ জানান, বাগানে ফুল ফোটার মুহুর্তটা অন্য রকম, শত ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি কোনভাবেই এর সৌন্দর্যটা মিস করতে চান না তাই প্রতিবারের মতো এবারও চলে এসেছেন যাদুকাটা তীরবর্তী শিমুল বাগানে।
জানা যায়, ১৯৯৮ সালে বাণিজ্যিক ভাবনা থেকেই তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের প্রয়াত চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন পাশের উত্তর বড়দল ইউনিয়নে মানিগাঁও গ্রামে যাদুকাটা নদীর পশ্চিম পারে ৯৭ বিঘা অনাবাদি ধু-ধু বালুচরে শিমুল বাগান তৈরী করেন। বাগানটিতে সারিবদ্ধ ভাবে ৩ হাজার শিমুলের চারা রোপন করেন। ২৬ বছরের ব্যবধানে বাগানের শিমুল গাছগুলো আজ অনেক বড় হয়েছে। পত্র পল্লবে পেখম মেলছে, গাছে গাছে প্রস্ফূটিত ফুলে লালে লাল হয়ে যায় যাদুকাটা নদীর তীর। আর এ নান্দনিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন যাদুকাটার নদীর তীরে বাড়ছে পর্যটকদের ভিড়। সাথে নাটক সিনেমার সুটিং করতেও আসছেন পরিচালক ও শিল্পীরা।


মানিগাঁও গ্রামের ইউপি সদস্য নওয়াজ আলী বলেন, বাগানে পর্যটকদের আকর্ষনীয় করতে এখানে পয়নিস্কাসকসহ নানামুখী সুবিধা করে রাখা হয়েছে। বিশেষ করে শিশুরা শিমূল ফুল দিয়ে তৈরি করেছে ‘লাভ ঘর’। ওখানে তরুণ তরুণীরা নানান ভঙিতে ছবি তুলে, রাখা হয়েছে ঘোড়া। অনেকেই ঘোড়ার পিটে চড়ে আনন্দ উপভোগ করছেন।
প্রয়াত চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীনের পুত্র নিজাম উদ্দিন জানান, শিমুল বাগানই আমার প্রয়াত বাবাকে সারা দেশের মানুষের সাথে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সরাসরি তাহিরপুর উপজেলা সদর হয়ে মোটর সাইকেল কিংবা সিএনজি করে শিমুল বাগান যাওয়া যায়।
তাছাড়া ঢাকা থেকে সরাসরি সুনামগঞ্জ শহরের প্রবেশ দ্বার আব্দুজ জহুর সেতুতে নেমে সিএনজি, বাইক কিংবা গাড়ি করে লাউড়েরগড় বাজার। সেখান থেকে নৌকায় যাদুকাটা নদী পার হলেই শিমুল বাগান। অথবা তাহিরপুর উপজেলা সদরে এসেও শিমুল বাগানে আসা যাওয়া করা যায়। সেক্ষেত্রে কোন খেয়া বা নদী পারাপার করতে হয় না।