স্টাফ রিপোর্টার
সুনামগঞ্জে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের পৃথক তিন মামলায় ১ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ২ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সাথে আসামীদের অতিরিক্ত ১ লক্ষ টাকা জরিমানা ও একজনকে খালাসের রায় দেন। মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টায় আসামীদের উপস্থিতিতে এই রায় দেন জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন।
ফাঁসির দ-প্রাপ্ত আসামীরা হলেন- জেলার মধ্যনগর উপজেলার গলহা গ্রামের বিদ্যাধর রায়ের ছেলে বিনয় রায়। ২০১৪ সালে স্ত্রীকে যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত এই দ-াদেশ দেন।
জানা যায়, ২০১৪ সালের ১ আগস্ট সিলেট জেলার লামাবাজার এলাকার মিন্টু চন্দ্র রায়ের বোন ময়না রায় (২৬) এর সাথে মধ্যনগর উপজেলার গলহা গ্রামের মৃত বিদ্যাধর রায়ের ছেলে বিনয় রায়ের (৪৩) বিয়ে হয়। বিয়ের পর বিনয় রায় যৌতুকের দাবিতে প্রায়ই ময়না রায়কে মারধর করতেন। একপর্যায়ে ময়না রায় স্বামীর বাড়ি থেকে বাধ্য হয়ে সিলেটে ভাইয়ের বাসায় চলে যান। তিনমাস পর আসামী বিনয় রায় যৌতুকের দাবিতে আর নির্যাতন করবে না অঙ্গীকার করে স্ত্রীকে সেখান থেকে নিয়ে আসে। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই ৩ লক্ষ টাকা যৌতুকের দাবিতে ময়না রায়কে মারপিট শুরু করে। মারপিটের খবর ময়না মোবাইলে তার ভাই মিন্টু চন্দ্র রায়কে জানান। আসামীর বাড়িতে এসে মিন্টু চন্দ্র রায় জানতে পারেন আশংকাজনক অবস্থায় ময়নাকে কলমাকান্দা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কলমাকান্দা হাসপাতালে গিয়ে তিনি বোনকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান। পরে ময়নার ভাই মিন্টু চন্দ্র রায় মধ্যনগর থানায় বিনয় রায়কে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে পুলিশ চার্জশীট দাখিল করে। রাষ্ট্রপক্ষ ১২ জন সাক্ষীকে আদালতে উপস্থাপন করেন। প্রমাণাদি পর্যালোচনা করে আদালত আজ মঙ্গলবার দুপুরে আসামী বিনয় রায়কে মৃত্যুদ- দেন। রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন পি.পি নান্টু রায় এবং আসামী পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মো. ওবায়দুর রহমান চৌধুরী।
এদিকে তাহিরপুর উপজেলার উজান তাহিরপুর গ্রামের আব্দুল আজীজের ছেলে আবিদ হোসেন রিমন বিরুদ্ধে ৮ বছরের শিশু ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং অতিরিক্ত এক লক্ষটাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছেন আদালত। জরিমানার অর্থ ভিকটিম ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রাপ্ত হবেন।
জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বিকালে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী (৮) ধর্ষণ করে আসামী আবিদ হোসেন রিমন। ভিকটিমের চিৎকারে লোকজন এগিয়ে এলে আসামী পালিয়ে যায়। আশংকাজনক অবস্থায় ভিকটিমকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৪ ফেব্রুয়ারি ভিকটিমের চাচা বাদি হয়ে তাহিরপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পর আসামী ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন পি.পি নান্টু রায় এবং আসামী পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মো. আব্দুল হক।
এছাড়াও দোয়ারাবাজার উপজেলার কলমদরের ছেলে সামসুদ্দিন মিয়ার বিরুদ্ধে মায়ের সামনে মেয়েকে ধর্ষণের দুটি আলাদা অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দেন আদালত।
জানা যায়, ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ দোয়ারাবাজার উপজেলার ঘিলাতলী গ্রামের ভিকটিমরা বোনের বাড়ি হাজির ভাঙ্গা যাওয়ার জন্য রওয়ানা দেয়। সন্ধ্যা ৭ টায় হাজির ভাঙ্গা গ্রামের বাঁধের নিচে পতিত জমিতে আসামী সমছু মিয়া অরফে সামছুদ্দিন মিয়া (৪০) ভিকটিমকে ও তার মেয়েকে ধর্ষণ করে। পরে আসামীরা মা ও মেয়েকে তাদের ফেলে রেখে চলে যায়। ভিকটিমদের চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এসে তাদের উদ্ধোর করে। ২৮ মার্চ ভিকটিমরা দোয়ারাবাজার থানায় মামলা দায়ের করে। রাষ্ট্রপক্ষ ৬ জন সাক্ষীকে আদালতে উপস্থান করে। সাক্ষ প্রমাণাদি পর্যালোচনা করে আদালত আসামী সমছু মিয়া অরফে সামছুদ্দিন মিয়া কে যাবজ্জীন কারাদ- এবং অতিরিক্ত একলক্ষ টাকা জরিমানা করেছেন। জরিমানার অর্থ ভিকটিম ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রাপ্ত হবে। এদিকে রফিক আলীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়।
রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন পি.পি নান্টু রায় এবং আসামী পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মো. সৈয়দ জামিলুল হক।
রায়ের বিষয় নিশ্চিত করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নান্টু রায় বলেন, অভিযোগ প্রমাণ করতে পারায় আদালত এই রায় প্রদান করেছেন। আমরা রায়ে খুশী।
- অগ্নিঝরা মার্চের শুরু আজ
- দোয়ারাবাজারে এমপি মানিকের জন্মদিন পালন