সুদের চাপে পালিয়ে বেড়াচ্ছে যুবক

এমএ রাজ্জাক, তাহিরপুর
তাহিরপুরে চলছে সুদের রমরমা ব্যবসা। বিভিন্ন মেয়াদি সুদের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছে সাধারণ মানুষ। আর সুদি ব্যবসায়ীরা বনে যাচ্ছে রাতারাতি কোটিপতি। সুদের টাকার চাপে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে উপজেলায়। গত ১৮ আগস্ট উপজেলার বালিজুড়ি ইউনিয়নের পাতারি গ্রামের ফয়সল আহমদ সৌরভ নামে এক যুবক এক লাখ টাকা সুদে এনে সাড়ে তিন লাখ টাকা সুদ দিয়েও রক্ষা না পেয়ে আত্মহত্যা করে। পরে এই ঘটনা ফেসবুকে ভাইরাল হলে রফিক ও সফিক নামে দুই সুদখোরের বিরুদ্ধে মামলা হয় থানায়। দুই সুদখোর এখনও পলাতক। সুদি ব্যবসা বন্ধে উপজেলা সদরে ইতোমধ্যে মানববন্ধনও হয়েছে।
এদিকে ঘটনার রেস কাটতে না কাটতে উপজেলার টাকাটুকিয়া গ্রামের বিরাজ রঞ্জন নামে এক যুবক সুদের টাকার চাপে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। বিরাজ রঞ্জন পাশের সূর্য্যরেগাঁও গ্রামের সুদি ব্যবসায়ী কায়রুল জামান ওরফে নুর ইসলামের কাছ থেকে ব্যবসায়িক প্রয়োজনে তিন লাখ টাকা এনেছিলেন। চার বছরে সাড়ে ৫লাখ টাকা সুদ দিয়েও রক্ষা পাচ্ছেন না তিনি। তাকে আরও তিন লাখ টাকা সুদ দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন নুর ইসলাম। নিরুপায় হয়ে গত মাসের ২৩ আগস্ট সুদি ব্যবসায়ীর কবল থেকে রক্ষা পেতে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বিরাজ রঞ্জন। এরপর থেকে সুদি ব্যবসায়ীর হুমকিতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন এখন তিনি।
জানা যায়, বিভিন্ন অসুবিধায় পড়ে একশো বা তিনশো টাকার সাদা ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর বা টিপ সই দিয়ে সুদের উপর টাকা নিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এসময় সাক্ষী নেয়া হয় সুদি ব্যবসায়ীর পছন্দমত লোকদের। পরে ইচ্ছামতো সুদখোররা ষ্ট্যাম্প পূরণ করে নেন। চেক ও সাদা ষ্টাম্পে স্বাক্ষর দিয়ে বেকায়দায় পড়ছেন মানুষজন। কথা মতো সুদ দিতে না পারলে এই ষ্ট্যাম্প দিয়েই আদালতে মামলা করছেন সুদি ব্যবসায়ীরা। মাসিক, সাপ্তাহিক এমনকি দৈনিক ভিত্তিতে সুদ নিচ্ছেন সুদি ব্যবসায়ীরা।
বিরাজ রঞ্জন বলেন, ব্যবসার জন্য সূর্য্যরেগাঁও গ্রামের সুদি ব্যবসায়ী নুরুল ইসলামের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা সুদে এনে সাড়ে ৫ লাখ টাকা সুদ দিয়েছি। আরও তিন লাখ টাকা সুদ দিতে তিনি এখন আমাকে চাপ সৃষ্টি করছেন। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিটক একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমার কাছ থেকে রাখা স্বাক্ষর করা চেক ও সাদা ষ্টাম্পে তার ইচ্ছেমতো লিখে আমার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন তিনি। মাতাব্বরদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও সুরাহা পাচ্ছি না আমি।
নুরুল ইসলামের ছেলে জুনাইদ মোবাইল ফোনে বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমার পিতার কাছ থেকে যায়গা বিক্রি করার কথা বলে টাকা নিয়েছেন তিনি। এখন যায়গাও দিচ্ছেন না, টাকাও ফেরত দিচ্ছেন না। আমরা তার বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা করেছি।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রায়হান কবির বলেন, এ ধরনের একটি লিখিত অভিযোগ পেয়ে তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য থানায় পাঠিয়েছি।