সুনামগঞ্জের আফছরের কফিনে মুন্সিগঞ্জের জালালের লাশ!

ইয়াকুব শাহরিয়ার, শান্তিগঞ্জ
এলাকাজুড়ে মৃত্যুর খবর প্রচার হয়। জানাজায় অংশ নিতে বাড়িতে এসে জড়ো হন স্বজনসহ গ্রামবাসী। লাশ বহনের জন্য প্রস্তুত করা হয় খাটিয়া। দাফনের জন্য গুরস্তানে খোঁড়া হয়েছে কবর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দাফন ও জানাজা হলো না। বাড়ি ভর্তি স্বজনদের আহাজারীর মধ্যেই জানানো হলো এই লাশ গ্রামের আফছরের নয়। মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ির জালাল মিয়া মরদেহ পূর্ব পাগলার দামোধরতপীর আফছর মিয়া কফিনে ঢুকিয়ে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। শনিবার দুপুরে এমন বিভ্রান্তি তৈরি হয় শান্তিগঞ্জের পূর্বপাগলা ইউনিয়নের দামোধরতপী গ্রামে।
এই গ্রামের মরহুম জমসিদ আলীর বড় ছেলে আফছর মিয়া (৪১) ফেব্রুয়ারি মাসের ২৮ তারিখে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে গ্রিসের এথেন্সের সুতরি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর সময় তার অপর ভাই মো. এমরান মিয়াও সেখানে (গ্রিসের এথেন্সে) ছিলেন। মৃত্যুর চারদিন পর লাশ দেশে আনার সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এমরান দেশে ফিরেন। শুক্রবার আফছরের লাশ দেশে আসার কথা ছিলো। মৃত আফছর মিয়ার কফিনে যে ঠিকানা দেওয়া হয়েছিল। ওই ঠিকানায় শুক্রবার রাত তিনটায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি লাশবাহী গাড়িও এসে পৌঁছায়। আফছর মিয়ার স্বজনদের কান্নায় ওই সময় ভারী হয়ে ওঠেছিল বাতাস। লাশের গাড়ী দেখে গ্রামের মাইকে জানাজার সময়ের ঘোষণা দেওয়া হয়। খুঁড়া হয় কবর। কিন্তু লাশ ফ্রিজিং ভ্যান থেকে নামানোর পর বাঁধে বিপত্তি। এ লাশ যে আফছর মিয়ার নয়!
পুলিশ ও আফছর মিয়ার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, যে লাশটি মরহুম আফছর মিয়ার বাড়িতে শুক্রবার রাত ৩টা ১৮ মিনিটে এসে পৌঁছেছে এ লাশ জালাল মিয়া (৫২) নামের এক ব্যক্তির। যার বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ি উপজেলার শিলনপুর গ্রামে। তার বাবা শফিক উদ্দিন। তিনিও গ্রিস প্রবাসী ছিলেন। হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ে তিনি মৃত্যু বরণ করেন। আগামী ১৩ মার্চ তার লাশ দেশে আসার কথা। ভুলবশত আফছর মিয়ার নাম সম্বলিত স্টিকারটি জালাল মিয়ার কফিনে এবং জালাল মিয়ার স্টিকার আফছর মিয়ার কফিনে লাগিয়ে দেওয়ায় একজনের লাশ আরেকজনের ঠিকানায় চলে আসে।
আফছর মিয়ার লাশ এখনো গ্রিসের এথেন্সে আছে। আগামী ১৩ মার্চ জালাল মিয়া’র লাশ যে ফ্লাইটে আসার কথা রয়েছে, ওই ফ্লাইটে আফছরের লাশ আসবে বলে জানিয়েন তার স্বজনরা।
আফছর মিয়ার ভাগ্নে তোফায়েল আহমদ কামরান বললেন, মামার লাশ রিসিভ করতে শুক্রবার ঢাকা এয়ারপোর্টে যাই। সেখানে সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়া দিয়ে রাত ৩ টা ২০মিনিটে এসে পৌঁছাই। এর মধ্যেই মাইকে জানাজার নামাজ কখন হবে জানিয়ে দেওয়া হয়। ভোর থেকে গুরস্তানে কবর খুঁড়া হয়। সকাল ১০ টায় যখন লাশবাহী গাড়ি থেকে লাশ নামিয়ে কফিন খোলা হয়, তখন দেখা যায় লাশ মামার নয়। এরপর আমরা পুলিশে খবর করি। পুলিশ এসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে এই মরদেহ মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ির। তার নাম জালাল মিয়া।
জালাল মিয়ার ছোট ভাই আলমগীর হোসেন শনিবার বিকাল ৫ টায় ফোনে জানালেন, আমার ভাইয়ের লাশ সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ থেকে ঢাকা বিমানবন্দরে পাঠাচ্ছে পুলিশ। ওখানে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে যাবার জন্য বলা হয়েছে। আমি মুন্সিগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছি। ওখান থেকে একঘণ্টা আগে (শনিবার বিকাল চারটায়) লাশ ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছে জানানো হয়েছে।
শান্তিগঞ্জ থানার ওসি মো. খালেদ চৌধুরী বলেন, বিষয়টি জেনে ঘটনাস্থলে আসি। অনেক চেষ্টা করে মরহুম জালাল উদ্দিনের ঠিকানা ও ফোন নম্বর পাই। তাদের সাথে কথা বলি। আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে এ লাশ হস্তান্তর করা হবে। দামোধরতপী গ্রামের আফছর মিয়ার লাশ এখনো আসে নি। সমস্যাটা হয়েছে গ্রিসে। আগামী ১৩ তারিখ আফছরের লাশ দেশে আসার কথা রয়েছে।