সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের তিন বাসস্টপেজ/ মানুষের উপকারে আসছে না সড়কে যানজট

বিশেষ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জ সিলেট সড়কে বাস চলাচলে যানজটের ভোগান্তি দূর করতে নির্মিত বাসস্টপেজের সুফল পাচ্ছে না এই পথে চলাচলকারীরা। সড়কের জাউয়াবাজার, পাগলাবাজার ও শান্তিগঞ্জে প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাসস্টোপেজ ট্রাক চালক, সিএনজি চালক ও ছোট ছোট দোকানীদের দখলে চলে গেছে। পথের মাঝখানে রয়ে গেছে বিদ্যুতের খুঁটি, একারণে সড়কের ব্যস্ততম এই তিন বাজার এলাকায় পরিবহনজট আগের মতোই লেগে থাকছে।
সুনামগঞ্জ সিলেট সড়কের শান্তিগঞ্জ, পাগলা বাজার ও জাউয়া বাজার এলাকায় যানজট লেগে থাকায় এই পথের যাত্রীবাহী বাসসহ দূরপাল্লার যানবাহনগুলো দীর্ঘদিন ধরেই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সড়কের উপরই বাস রেখে যাত্রী ওঠানামা করানো এবং সিএনজি অটো রিক্সাসহ ব্যক্তিগত গাড়ি সড়কে পার্কি করে রাখা সহ সড়কের দুইপাশে দোকানপাট বসে এই বিড়ম্বনা তৈরি করে রাখা হয়।
তিন বছর আগে সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ সারাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী জেলার একমাত্র এই সড়কে ভোগান্তি দূর করতে শান্তিগঞ্জ, পাগলাবাজার ও জাউয়াবাজারে সড়ক প্রশস্তকরণের পাশপাশি সড়ক স্টোপেজ নির্মাণ করে। একেক বাজার এলাকায় স্টোপেজ করতে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয় হয়। ১৮ ফুটের সড়ককে স্টোপেজসহ ৭৪ ফুট করা হলেও এখনো মূল সড়কেই বাস রেখে যাত্রী ওঠানামা করাতে হচ্ছে বাসগুলোকে।
এই সড়কে নিয়মিত চলাচলকারী ব্যাংকার সুমন কুমার দাস বললেন, পাগলাবাজারে ও জাউয়াবাজারে এখনো পরিবহনের জট থাকে। শান্তিগঞ্জেও ধীরে চালাতে হয় বাস। পাগলাবাজারে সড়কের একপাশে বিদ্যুতের খুঁটি রয়ে গেছে। ওই পাশে অসংখ্য ট্রাক-সিএনজি ২৪ ঘণ্টা পার্কি করা থাকে।
পাগলা বাজারের শ্রমিক সহিবুর মিয়া বললেন, বীরগাঁও সড়কের মুখ থেকে পাগলা কলেজ মার্কেটের সামনের অংশ পর্যন্ত সিলেট থেকে সুনামগঞ্জগামী বা দূরপাল্লার সুনামগঞ্জগামী বাসের স্ট্যান্ড। আবার পাগলা ডাকবাংলো থেকে পাগলা হাইস্কুলের সামনা পর্যন্ত রয়েছে সুনামগঞ্জ থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাবার যাত্রীবাহী যানবাহনের স্ট্যান্ড। ডাকবাংলোর সামনের অংশে ট্রাক, সিএনজি চালকরা এখন পার্কি স্ট্যান্ড করেছে। এখানে সড়কের মাঝখানে একটি বিদ্যুতের খুঁটি থাকায় এই অংশ যে উদ্দেশ্যে করা হয়েছে, সেভাবে কাজে লাগছে না। একারণে সুনামগঞ্জে যাওয়া এবং আসার গাড়ীগুলো একপাশেই রেখে যাত্রী ওঠানামানো সারতে হচ্ছে।
শান্তিগঞ্জের বাসস্টোপেজের উত্তরপ্রান্তে মাছ ও কাঁচা বাজার ব্যবসায়ী, চায়ের দোকানীরা বসছে। রাখা আছে বালু-পাথরও। অন্য প্রান্তের কিছু অংশ দেবে গেছে। এ কারণে এখানেও যানজট আছে।
সুনামগঞ্জ জেলা বাস মিনিবাস কোচ-মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক বললেন, পাগলাবাজারে কেবল নামে বাসস্টোপেজ হয়েছে। স্টোপেজের একপাশে বাস ঢুকানোই যাচ্ছে না। ওখানে সিএনজি ও ট্রাকস্ট্যান্ড হয়ে গেছে। যাত্রীবাহী বাসগুলোকে আগের মতোই সড়কের মাঝখানে রাখতে হয়। একারণে ভিড় লাগে। পাগলাবাজারে আলাদা একটি সিএনজি ও ট্রাক স্ট্যান্ড করার দাবিও জানালেন তিনি।
সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজ আহমদ বললেন, সড়ক বিভাগের দায়িত্ব অবকাঠামো তৈরি করে দেওয়া, শৃঙ্খলা রাখবে পুলিশ। স্টোপেজসহ পাগলা, জাউয়া ও শান্তিগঞ্জে ১৮ ফুটের সড়ক ৭৪ ফুট করা হয়েছে। পাগলাবাজারে একপাশে বিদ্যুতের খুঁটি রয়ে গেছে। পল্লী বিদ্যুতকে খুঁটি ওঠানোর চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারা খুঁটি ওঠাতে দুই লাখ খরচ লাগবে জানিয়ে চিঠি দিয়েছি। আমরা এই বরাদ্দ চেয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠিয়েছি। এখনো বরাদ্দ আসে নি। সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এক খুঁটির জন্য এতো টাকা খরচকে স্বাভাবিকভাবে নেন নি।
সুনামগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের জিএম সুদীপ কুমার বিশ^াস বললেন, পাগলাবাজারে সড়কে থাকা খুঁটি উঠানোর জন্য সড়ক বিভাগের চিঠি পেয়ে ওখানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এক খুঁটি উঠালে চলবে না। লাইনের অ্যালাইনমেন্ট ঠিক রাখতে হলে আরও কয়েকটি খুঁটি সরাতে হবে। এজন্য খরচ বেশি চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে কর্মরত ট্রাফিক সার্জন কবির আহমদ বললেন, পাগলাবাজারে একপাশের বাসস্টোপেজে বিদ্যুতের খুঁটি থাকায় এই অংশ কাজে আসছে না। সিএনজি কাভার্ডভ্যান চালকরা খুঁটির একপাশে থাকছে। খুঁটি তুলে দিলে ওই স্টোপেজে কাউকে যানবাহন রাখতে দেওয়া হবে না। জাউয়াবাজারে সড়ক ও স্টোপেজ পরিস্কার করে দেওয়া হয়েছে। শান্তিগঞ্জের স্টোপেজ এই মাসের মধ্যে পরিস্কার হয়ে যাবে।
সুনামগঞ্জের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মহিবুল ইসলাম বললেন, বহু চেষ্টা করা হচ্ছে, পুলিশ ওখানে থাকলে সবই ঠিক থাকে, সরে আসলেই শৃঙ্খলা নষ্ট হয়ে যায়।