সুরমার ভাঙন/ বিলীনের পথে জালালপুর

আশিক মিয়া, দোয়ারাবাজার
সুরমার অব্যাহত ভাঙনে দোয়ারাবাজার উপজেলার জালালপুর গ্রাম বিলীন হওয়ার পথে। গত কয়েক দশকে গ্রামে শতাধিক বাসিন্দাদের ঘর সুরমা নদীর গর্ভে বিলীন হয়েছে। বর্তমানে কাটাখালি বাজার থেকে জালালপুর গ্রাম পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার অংশ ভাঙছে।
নদীর পাড়েই বীর মুক্তিযোদ্ধা উস্তার আলীর বসতঘর। বাড়ির উঠানে দেখা দিয়েছে ফাটল। ইতোমধ্যে পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন তিনি। বীর মুক্তিযোদ্ধা উস্তার আলী বলেন, নদী ভাঙনে বসতভিটা এখন বিলীন হওয়ার পথে। বড় বড় ফাটল দেখা দেওয়ায় ভয়ে পরিবারকে সরিয়ে নিয়েছি। নদী ভাঙনে আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি, আমাদের দেখার কেউ নেই।
তিনি আরও বলেন, সুরমার ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় প্রশাসন, জেলা প্রশাসক, পাউবো, এমপি মহোদয়ের কাছে কত আবেদন করেছি, দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি, কিন্তু এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, সুরমা নদীর দক্ষিণ পাড়ে অবস্থিত জালালপুর গ্রামটি এখন নদীভাঙনে বিলীন হওয়ার পথে। ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, কবরস্থান, মসজিদ-মাদরাসাসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদী গ্রাস করেছে। প্রায় আড়াইশ’ বছরের পুরোনো মসজিদ ভাঙনের কবলে পড়ে ইতোমধ্যে নদীতে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
গ্রামবাসীরা বলেন, নদী ভাঙনের বিষয়ে প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে দীর্ঘদিনেও কোনো প্রতিকার মেলেনি। নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ। দ্রুত ভাঙন ঠেকাতে না পারলে পুরো গ্রামটি বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভাঙন রোধে পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
গ্রামের বাসিন্দা প্রবীণ সংবাদকর্মী এমএ করিম লিলু (৬০) বলেন, কয়েক দশকে অন্তত শতাধিক পরিবার বসতভিটে, ফসলি জমি, ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। প্রায় আড়াইশ’ বছরের পুরাতন জামে মসজিদও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ সুদৃষ্টি না দিলে পুরো গ্রামটি সুরমার জলে মিশে যাবে।
মাওলানা কাজী মাহমুদুর রহমান আজাদ বলেন, চরম ঝুঁকির মধ্যে আমরা বসবাস করছি। নদীভাঙনের শিকার হয়ে অনেকে গ্রাম ছেড়ে চলে গেছেন। অসংখ্য বসত ঘরসহ গ্রামের প্রাচীন জামে মসজিদটি এখন বিলীনের পথে। নদী ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে অর্ধেক গ্রাম নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফ মুর্শেদ মিশু বলেন, অবহিত করা হলে নদী ভাঙনের প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেওয়ান তানভীর আশরাফী চৌধুরী বাবু বলেন, সুরমার ভাঙনে জালালপুর গ্রাম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিলীন হওয়ার পথে গ্রামের প্রাচীন জামে মসজিদসহ অনেক বসতভিটা। আমি সরজমিন পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসকের সমন্বয় সভায় নদী ভাঙনের বিষয়টি উত্থাপন করেছি। পাউবো কর্মকর্তারা পরিদর্শনও করেছেন। আশা করি শীঘ্রই তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।