বেশ রসিকতা করেই আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছিলেন, ‘ভারত গরু না দিলে আমরা গবাদি পশুতে পুরো স্বনির্ভর হব। আপনারা গরু দেয়া বন্ধ করে দিলে আমরা কৃতজ্ঞ থাকব।’ শনিবার রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রথম বাংলাদেশ পোল্ট্রি কনভেনশনে মন্ত্র্রী এই কথা বলেন। এই রসিকতার মধ্যে যে উচ্চাকাক্সক্ষার সুর সেটি বহুদিন ধরে আমাদের সংগ্রামী খামারীরা নিরবে বাজিয়ে চলেছেন। একসময় ছিলো, সে বেশি দিন আগের নয়, আমাদের স্মরণ কালের মধ্যেই; যখন ভারতীয় গরু না আসলে কোরবানির পশুর হাট ¤্রয়িমান হয়ে যেতো। ভারতীয় গরু না আসলে দেশীয় ভোক্তারা মাংসের স্বাদ নিতে পারতেন না। সে পরনির্ভরশীলতা কাল গত হয়েছে। এখন খুব বেশি গরু আনতে হয় না প্রতিবেশী দেশ থেকে। বাংলাদেশ যে ক’টি কৃষিজ ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নতি করেছে সেগুলো হলোÑ মাছ চাষ, পোলট্রি ও গবাদিপশু পালন। এসব ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতি, গত দুই/তিন দশকের, এককথায় প্রশংসাজনক। এই খাতে গড়ে উঠেছে বহু খামারী, তৈরি হয়েছে বহু মাঝারী ও বড় উদ্যোক্তা। মানুষের প্রোটিন ব্যবহারের সক্ষমতা বেড়েছে আগের চাইতে অনেক বেশি। মোটামুটি সহনীয় দামে মানুষ মাছ, মাংস, ডিম, দুধ খেতে পারছেন। এর প্রভাব পড়েছে জনস্বাস্থ্যে। অতীতের মত চরম পুষ্টিহীন মানুষ এখন খুব বেশি দেখা যায় না। ক্রমাগত উন্নতির সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে এসব জায়গায়। তাই মন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, ভারত গরু না দিলে আমরা স্বনির্ভর হব।
সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের এসব শিল্প কিছুটা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে। বিশেষ করে গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি ও মাছের কৃত্রিম খাদ্যের দাম বেড়ে গেছে অনেক। ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে খামারীরা দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে করে সাধারণ ভোক্তাদের ভোগ প্রবণতা আগের চাইতে কমে গেছে। চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট ও গত তিন বছরের করোনা মহামারীর প্রভাব গবাদিপশু ও পোল্ট্রি শিল্পের যে ক্ষতি করে চলেছে তা দক্ষতার সাথে সামাল দেয়ার উপর নির্ভর করছে সামনের দিনগুলোতে এই খাতের অসংখ্য উদ্যোক্তারা টিকে থাকতে পারবে কিনা। করোনার কারণে সরকার যে প্রণোদনা দিয়েছিলেন তার ছিটেফোটাও ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তাদের কপালে জুটেনি। নিজেদের সৃজনশীলতা দিয়েই এই উদ্যোক্তারা সংকট মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে বহু খামারী খামার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। সরকারকে তাই কার্যকরভাবে জনগণের পুষ্টির জন্য অপরিহার্য এইসব খাতকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসতে হবে।
কর্পোরেট বৃহৎ পুঁজির দাপটের কারণেও আমদের বহু ক্ষুদ্র খামারী ক্রমাগত হারিয়ে যাচ্ছেন। এটি জানা কথা বৃহৎ পুঁজি ছোট পুঁজিকে বাজার থেকে হটিয়ে দেয়। বৃহৎ পুঁজির মালিকরা বাজার দখলের জন্য সাময়িক মূল্য কমিয়ে দেয়। এতে যে লোকসান হয় তা সামাল দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে তাদের। যখন বাজার দখল হয়ে যায় তখন তারা আবার দাম বাড়িয়ে আগের লোকসান উঠিয়ে নিজেদের উচ্চ মুনাফার ক্ষেত্রকে নিশ্চিত করে নেয়। হঠাৎ দাম কমানোর কারণে সৃষ্ট লোকসানের বোঝা বহন করতে পারেন না ক্ষুদ্র খামারীরা। তাই তারা বিলীন হয়ে যান। এরকম যাতে না হয় সেজন্য বাজার ব্যবস্থার উপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ জরুরি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো আমাদের রাষ্ট্র ও বাজার ব্যবস্থা তা দক্ষতার সাথে করতে সক্ষম হয় না। গ্রামীণ কর্মসংস্থান বজায় রাখাসহ অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করার জন্য ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দান করা রাষ্ট্রের অপরিহার্য দায়িত্ব বটে। সেটি করা গেলেই কেবল মন্ত্রী মহোদয় যে সিনা টান করা কথা বলেছেন সেটি সকল অর্থে অর্থবহ হয়ে উঠবে।
ৃ