ইয়াকুব শাহরিয়ার, শান্তিগঞ্জ
গত দুইদিন আগেও শান্তিগঞ্জ উপজেলার কৃষদের চোখেমুখে ছিলো দুঃশ্চিন্তার ভাঁজ। বৃষ্টি না হওয়ায় লালচে রঙ ধরতে শুরু করেছিলো হাওরে রোপনকৃত ধানের চারায়। জমি ফেটে চৌচির হচ্ছিলো বলে চিন্তার শেষ ছিলো না উপজেলার ৮ ইউনিয়নের কয়েক হাজার কৃষকের। গত সপ্তাহ থেকে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বৃষ্টিপাত শুরু হলেও শান্তিগঞ্জে বৃষ্টি হচ্ছে শুক্রবার রাত থেকে। তাও রিমঝিম বৃৃষ্টি। তবু এ বৃষ্টিতে স্বস্তি ফিরে এসেছে কৃষক মাঝে। এদিকে, বেপরোয়া মাটির ট্রাক্টর থেকে মাটি পড়ায় বৃষ্টিতে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক, বিভিন্ন ইউনিয়নের অভ্যন্তরিন সড়কসহ উপজেলার একাধিক সড়কেরও একই অবস্থা। এতে ব্যবহার অনুযোগী হয়ে উঠেছে একাধিক অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ সড়কপথ।
উপজেলার দেখার হাওর, তেছারকোনা, নাগডরা, ডুকলাখাই, পাখিমারা ও জামখলার হাওরসহ বেশ কয়েকটি হাওরের একাধিক কৃষকরা জানান, আপাতত তাদের দুঃশ্চিন্তা কেটেছে। এই মুহুর্তে বৃষ্টির খুবই দরকার ছিলো। আরও আগে হলে ভালো হতো। তবুও তারা খুশি। ধানে নতুন শীষ বেরোচ্ছে। বৃষ্টি পাওয়ায় এখন দ্রুত বেরিয়ে যাবে। এই বৃষ্টিতে কৃষক ও কৃষির অনেক উপকার হবে। শুধু ধান নয়, সব রকমের উৎপাদিত শস্যের উপকার হবে বৃষ্টিতে।
যাত্রীবাহী যানবাহনের বাড়তি চাপ ছিলো লক্ষণীয়। কারণ, পণতীর্থে গঙ্গাস্নান করতে ও শাহ আরেফিনের মাজারের বার্ষিক ওরসে অংশ নিতে হাজার হাজার পুণ্যার্থী সিলেট- সুনামগঞ্জ সড়ক দিয়েই তাহিরপুরে যাচ্ছেন। সড়ক দিয়ে চলাচলকারী মাটির ট্রাক্টর থেকে পড়ে যাওয়া মাটি বৃষ্টিতে ভিজে মারাত্মক পিচ্ছিল করে রেখেছে চলাচল পথ। ঘটছে দুর্ঘটনাও। উপজেলার পূর্ব পাগলা ইউনিয়নের মাহমুদপুর থেকে ছাতকের রড়কাপন পয়েন্ট পর্যন্ত মাটির কাদায় পিচ্ছিল হয়ে আছে।
সড়কের পিঠাপশী পয়েন্ট থেকে জাউয়া বাজার পর্যন্ত বেশ কয়েকটি স্থানে সড়কে মাটি পড়ে বিপজ্জনক অবস্থা তৈরি হয়েছে। শান্তিগঞ্জের মৎস্য হ্যাচারির সামনের কিছু অংশ, আহসানমারা সেতু সংলগ্ন ও দিরাই সড়ক মোড়ের কিছু অংশে মাটি পড়ে বেহাল অবস্থা হয়েছে। এতে ঘটছে একাধিক সড়ক দুর্ঘটনা।
বাস চালক শহিদ মিয়া বলেন, মাটি পড়ে রাস্তার এমন বেহাল অবস্থা তৈরি হয়েছে। রাস্তা দিয়ে বাস চালাতে ভীষণ ভয় করে। ৩/৪টা গাড়ি আহসানমারা সেতুর কাছে এক্সিডেন্ট করেছে। আমার পরিচিত বাস চালক বাবুল মিয়ার গাড়িও দুর্ঘটনার স্বীকার হয়েছে। এটি শুধুমাত্র মাটি পড়ে রাস্তা পিচ্ছিল হওয়ার কারণে ঘটছে।
দর্শনদেউড়ী মিনিবাস শ্রমিক সমিতির (১৪১৮) সাংগঠনিক সম্পাদক কবির উদ্দিন, অপর এক চালক শাহনূর মিয়া ও সিএনজি চালক শহিদ মিয়া বলেন, দুইদিন ধরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছি। সব জায়গায় মাটির কারণে রাস্তা পিচ্ছিল। গাড়ি এক জায়গায় ব্রেক করলে স্লিপ করে অন্য জায়গা গিয়ে থামে। কয়েকদিন আগে চেকনিখাড়ার সেতু সংলগ্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ জন নিহত হয়েছেন। এর কারণও মাটির ট্রাকের পড়ে যাওয়া মাটি।
অবশ্য. মাটির ট্রাকের কারণে একটি দুর্ঘটনার কথা ছাড়া অন্য কোনো দুর্ঘটনার কথা স্বীকার করেন নি জয়কলস হাইওয়ে থানার ওসি সেলিম আহমদ। তিনি বলেন, মাটিতে পিচ্ছিল হয়ে একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে কেউ নিহত হন নি। তাছাড়া, আমার লোকবল কম। মাত্র ৬/৭ জন সহকর্মী আছেন। একজন এসআইও নাই। সকলকে সচেতন হতে হবে। এসব এলাকায় যেসব জনপ্রতিনিধি আছেন তাদেরকে সচেতন হতে হবে। যারা মাটির ব্যবসা করেন তাদের সাথে কথা বলে আমরা চেষ্টা করছি নিয়ন্ত্রণে আনার।
এই পথে দায়িত্ব পালনকারী টিএসআই (ট্রাফিক পুলিশ) অনন্ত কুমার সরকার বলছেন- এলাকায় ব্যপক উন্নয়ন কাজ হচ্ছে। এজন্য মাটি কাটা হচ্ছে। যারা মাটি কাটছেন তাদের সাথে কথা হয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব সড়ক পরিষ্কার করে দেবার কথা বলা হয়েছে।
- বৃৃষ্টি উপেক্ষা করে লাখো মানুষের মিলনমেলা
- বৃষ্টিতে হাওরের অনেক বাঁধে ফাটল