স্টাফ রিপোর্টার
হাওরের কৃষকদের পক্ষে সোচ্চার ছিলেন আজাদ মিয়া। ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে আদালতে মামলাও করেছিলেন কয়েকজনের বিরুদ্ধে। কিন্তু এই প্রতিবাদী মানুষটিকেই চার বছর আগে প্রাণ দিতে হয়েছে দুর্বৃত্তদের হামলায়।
‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’ সংগঠনের নেতা আজাদ মিয়ার বাড়ি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার জালালপুর গ্রামে। দুর্বৃত্তদের হামলায় আহত হয়ে ২০১৯ সালের ১৭ মার্চ তিনি মারা যান। পরদিন পরিবারের পক্ষ থেকে চারজনকে আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশ প্রথমে মামলাটি তদন্ত করে। এখন আদালতের নির্দেশে মামলাটি এক বছর ধরে তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
আজাদ মিয়ার পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ, এক বছরেও তদন্ত শেষ হয়নি। উল্টো এখন হত্যা মামলার এক আসামি তাদের পরিবারের তিনজনের বিরুদ্ধে লুটের মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।
পরিবারের লোকজন বলছেন, বাঁধ নির্মাণের অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদ করতে গিয়েই প্রাণ দিতে হয়েছে তাঁকে। দ্রুত মামলার তদন্ত শেষ এবং দোষীদের বিচার চান তাঁরা।
‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় জানান, আজাদ মিয়া তাদের সংগঠনের সদর উপজেলা কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন। তিনি একজন প্রতিবাদী লোক হিসেবে এলাকায় পরিচিত ছিলেন। বিজন সেন রায় বলেন,‘হাওরে বাঁধ দুর্নীতিতে একটি শক্তিশালী সিন্ডিেেকট যুক্ত। আজাদ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, মামলা করেছেন। তিনি কৃষকদের পক্ষে সোচ্চার ছিলেন আজাদ। সুনামগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষ এই হত্যার বিচার চায়। দ্রুত মামলার তদন্ত ও বিচার কাজ শেষ করতে হবে।’
মামলা ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আজাদ মিয়ার বাড়ির পাশেই সদর উপজেলার দেখার হাওর। এই হাওরে ২০১৮ সালে বিভিন্ন প্রকল্পে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে এক কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে কয়েকটি অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পের কাজ হয়। এ নিয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে আজাদ মিয়া প্রতিবাদ করেন। এক পর্যায়ে তিনি বাদী হয়ে বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ এনে স্থানীয় মোল্লাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ার্যমান নুরুল হক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা ও ভূমি কার্যালয়ের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তদন্তাধীন আছে।
আজাদ মিয়া হামলার শিকার হওয়ার আগে ওই বছরের ৬ মার্চ তাঁর নেতৃত্বে বাঁধ নির্মাণের অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদে এলাকার বেতগঞ্জ বাজারে মানববন্ধন হয়। এরপর তিনি ১৪ মার্চ রাত সাড়ে দশটার দিকে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বড়পাড়া এলাকার বাসায় ফেরার পথে শহরের স্টেশন রোড এলাকায় হামলার শিকার হন। ১৭ মার্চ রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান।
এর পরদিন আজাদ মিয়ার বড় ভাই স্কুলশিক্ষক আজিজ মিয়া বাদী হয়ে সদর থানায় ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল হক, উকিল আলী, পাভেল মিয়া, রিপন মিয়াসহ আরও অজ্ঞাত ৭-৮জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। প্রায় এক বছর পর মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ পাভেল মিয়া, শ্রাবণ মিয়া ও রিপন মিয়া নামের তিনজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। অভিযোগপত্র থেকে বাদ পড়েন নুরুল হক ও উকিল আলী। এই অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দেন বাদী। পরে গত বছরের ৮ নভেম্বর মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন আদালত।
আজাদ মিয়ার ছোট ভাই কলেজশিক্ষক মো. ফরিদ মিয়া বলেন, ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় তাঁকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা মামলার তদন্ত দ্রততম সময়ে শেষ করে এই নৃশংস হত্যাকা-ে জড়িতদের ফাঁসি চাই।
মামলার তদন্তে থাকা পিবিআইয়ের কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে হলেই আদালতের প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
- এমরুল কায়েস লোক উৎসবে মানুষের ঢল
- শান্তিগঞ্জে দুইপক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধসহ আহত ১৫, গ্রেপ্তার ৩