রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে হাছন রাজাকে সিলেবাসে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে
স্টাফ রিপোর্টার
স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির যে অপূর্ব মিলন সেটি হাছন রাজার গানে রয়েছে। স্রষ্টাকে খুঁজতে আমাদের আমাদের গয়া, কাশী, মক্কা কোথাও যাওয়ার দরকার নাই, যদি আমরা নিজেকে জানতে পারি। এজন্যই হাছন রাজার গান কাল অতিক্রম করেছে। হাছন রাজার দর্শন বিশ্বমানবতার কথা বলে। আমরা যদি সেই মত এবং পথ অনুসরন করি তাহলে পৃথিবী সুন্দর হবে। অনার্স এবং মাস্টার্স পর্যায়ে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি হাছন রাজা কে সিলেবাসে অন্তর্ভূক্ত করেছি।
শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সুনামগঞ্জ ঐতিহ্য জাদুঘর প্রাঙ্গণে হাছন রাজার মৃত্যুশতবার্ষিকী উদযাপন ও হাছন রাজা লোকগান সন্ধ্যা অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের প্রভাষক মো. রওশন আলম।
অনুষ্ঠানে অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, কবিগুরু হাসন রাজাকে মূল্যয়ন করতে গিয়ে বলেছেন, ‘পূর্ব বঙ্গের একটি গ্রাম্য কবির গানে দর্শনের একটি বড় তত্ত¡ পাই। সেটি এই যে, ব্যক্তি স্বরূপের সহিত সম্মন্ধ সূত্রেই বিশ্বসত্য। মানবিক বোধকে তিনি উচ্চ স্তরে স্থান দিয়েছেন যেখানে মমত্ব, ভ্রাতৃত্ব, সংহতি এবং সহনশীলতাবোধের গভীর দিকদর্শন রয়েছে।’ সকল ধর্মের বিভেদ অতিক্রম করে তিনি গেয়েছেন মাটি ও মানুষের গান। হাছন রাজা অসাম্প্রদায়িক ছিলেন।
বক্তারা আরও বলেন, আমরা চাই সুনামগঞ্জের সংস্কৃতি অঙ্গনকে সারাদেশে তুলে ধরতে। হাছন রাজাকে দেওয়ার কিছু নাই। হাছন রাজার কাছ থেকে আমাদের নেয়ার আছে অনেক কিছু। আসুন আমরা হাছন রাজার কাছ থেকে নেয়ার চেষ্টা করি। আমাদের মধ্যে যেনো কোন বিভেদ না থাকে- নিজেদের মধ্যে, পরিবারের মধ্যে। এইভাবে দুইটা-তিনটা অনুষ্ঠান না করে আসুন সকলে মিলে আমরা একসাথে হাছন রাজা উৎসব করি। হাছন রাজা পরিবারের সম্পদ নন, তিনি রাষ্ট্রের সর্বোপরি বিশ্বের সম্পদ।
এর আগে হাছন রাজার পরিষদের আয়োজনে ও জেলা পরিষদের সহযোগিতায় অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী।
হাছন রাজার পরিষদের সভাপতি সামারিন দেওয়ান’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল হুদা মুকুট।
বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট মদন মোহন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ লে. কর্নেল (অব:) আতাউর রহমান পীর, সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর রজত কান্তি সোম, সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার জামিল চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মুকিত চৌধুরী, লেখক সৈয়দ বদরুল আলম, লেখক ও গবেষক অ্যাডভোকেট আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসাইন, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামছুল আবেদীন, হাছন রাজা পরিষদের সহ সভাপতি মলয় চক্রবর্তী রাজু, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চের সভাপতি প্রদীপ পাল নিতাই।
স্বাগত বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জ পৌর কলেজের অধ্যক্ষ ও হাছন রাজার মৃত্যুশতবার্ষিকী উদযাপন পরিষদের আহবায়ক শেরগুল আহমদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ আকিকুর রহমান।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন হাছন রাজার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান তাছাদ্দুক রাজা ইমন।
এরপর জেলা শিল্পকলা হাছন রাজার গান পরিবেশন করেন জাতীয় শিল্পী গরীব মুক্তার, টি.এইচ মোহন, ডা. রওশন আলম। এছাড়াও হাছন রাজার গান পরিবেশন করেন জেলা একাডেমির সংগীত শিল্পী এবং স্থানীয় শিল্পীরা।
প্রসঙ্গত, লক্ষণশ্রীতে ১৮৫৪ সালের ২১ ডিসেম্বর মরমী কবি হাসন রাজার জন্ম হয়। ১৯২২ সালের ৬ ডিসেম্বর সোমবার তিনি মৃত্যুবরণ করেন। সুনামগঞ্জ পৌর শহরের গাজীর দরগা পারিবারিক কবরস্থানে রয়েছে তাঁর সমাধি।
- তাহিরপুরে বাঁধে এখনো মাটির কাজ শেষ হয়নি
- সিরিজ নিশ্চিত করতে চায় টাইগাররা