১৫ লাখ টাকার কাজ তিন লাখে শেষ

বিশেষ প্রতিনিধি
পনের লাখ টাকার জরুরি বরাদ্দের কাজ হয়েছে তিন লাখ টাকার। কাজে অনিয়ম হওয়ায় সড়ক ধসে নদীতে বিলীন হচ্ছে। দুই লাখ মানুষের একমাত্র যোগাযোগ সড়কের এমন অবস্থায় বিড়ম্বানায় পড়েছেন দোয়ারাবাজারবাসী। সুনামগঞ্জের দোয়ারা-ছাতক সড়কের নৈনগাঁওয়ের পাশের অংশে এমন বিপজ্জনক অবস্থা।
সরেজমিনে দেখা যায়, সুনামগঞ্জের ছাতক-দোয়ারা সড়ক যান চলাচলের একেবারে অনুপযোগি হয়ে আছে। সড়কের নৈনগাঁও পর্যন্ত অংশে পায়ে হেঁটে চলাই দায়। নৈনগাঁওয়ের পাশের ছয়শ-থেকে সাতশ সাত ফুট অংশ সড়ক ভেঙে নদীতে বিলীন প্রায়। ঝুঁকি নিয়ে এই অংশে চলাচল করছে ছোট ছোট কিছু যানবাহন। সিএনজি, অটোরিক্সা, কার ও মাইক্রোবাস ছাড়া অন্য বড় পরিবহন চলাচলের কোন উপায় নেই এই সড়কে। বাস, ট্রাক কিংবা কাভার্ড ভ্যান দোয়ারাবাজার উপজেলা সদরে আসার কোন ব্যবস্থা নেই।
দোয়ারার সঙ্গে ছাতক-সিলেটসহ সারাদেশের সরাসরি যোগাযোগ রক্ষাকারী একমাত্র এই সড়ক সচল রাখার জন্য সম্প্রতি জরুরি সংস্কার কাজ করায় সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ। বরাদ্দ হয় পনের লাখ টাকা।
রোববার বিকালে এই সড়ক দিয়ে ছাতকে যাবার সময় স্থানীয় সিএনজি চালক আব্দুল করিম ও শফিকুল ইসলাম বললেন, ‘দেখইন ভাই যে কোন সময় গাড়ি উল্টাইতো পারে, ভাইঙ্গা নদীত যাইতোগি পারে সড়ক, ইতার লাগি যাত্রী লামাইয়া দেই, আপাতত সড়ক আটকাইবার (আটাকোর জন্য) কাম (কাজ) করানি অইছে (হইছে), কেনে যে ই-কাম করছে জানি না আমরা। ছোট ছোট আট- থাকি নয় ফুট লম্বা দুই তিনশ বল্লি (কাঠের-বাশের- খুঁটি) দিছে । মাটিত পুঁতছেও কম। প্যলাসেটিং ঠিকমত করছে না। বেশি অইলে (হলে) ৫০ টা জিও ব্যাগ লাগাইছে। সবতায় (সবকিছু মিলে) তিন লাখ টেকার (টাকা) কাজ অইছে না (হয় নি)। হুনছি বরাদ্দ ১৫ লাখ টেকা আছিল। এমপি সাবরে বিষয়টা দেখানি দরকার। পাশে দাঁড়ানো অটোরিক্সা চালক আব্দুর রব বললেন, এই কাজের ঠিকাদার তানভির আহমদ এমপি সাবের ভাতিজা। এর লাগি কেউ মাতে না (কথা কয় না)।
স্থানীয় অটোটেম্পু, অটোরিক্সা, ট্যাক্সিক্যাব মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান বললেন, এই সড়ক দিয়ে ভয়ে যেতে চান না, সিএনজি অটোরিক্সা চালকরা। এমপি সাবের (স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক) চেষ্টায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ সড়ক চালু রাখার জন্য জরুরি মেরামত কাজ করার জন্য ১৫ লাখ টাকার জরুরি কাজ করিয়েছি। কিন্তু ওখানে তিন লাখ টাকার বেশি কাজ হয় নি। বললেন, কেবল টাকার লুটপাট হয়েছে। সড়ক চালু রাখা যাবে না এই কাজে।
কাজের ঠিকাদার তানভির আহমদ বললেন, দোয়ারা-ছাতক সড়কে যোগাযোগ স্বাভাবিক রাখতে এক কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দ প্রয়োজন। সড়কটি আরও ভেতরের দিকে নতুনভাবে করতে হবে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ সেটি করছে না। এখানকার ভাঙন ঠেকাতে জরুরি কাজ আমি করিনি। দোয়ারাবাজারের কিছু গরিব মানুষ আমার ঠিকাদারী লাইসেন্সে করছে। তিন লাখ টাকা নয়। অনেক বেশি টাকার কাজ ওখানে করা হয়েছে। আটশ বল্লি ওখানে পুঁতেছে জানিয়েছে তারা।
সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রমানিক বললেন, বিগত বন্যায় দোয়ারা-ছাতক সড়কের বেহাল অবস্থা হয়েছে। নৈনগাঁওয়ের পাশের অংশ বন্যার পর নদী ভাঙনে বিলীন প্রায়। ভাঙন অংশকে নতুনভাবে করতে হবে। নদীর পাড় থেকে তিন চারশ ফুট ভেতরে নিয়ে যেতে হবে সড়ক। এজন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেতে সময় লাগবে। আমরা চেষ্টা করছি সিএনজি বা অ্যাম্বুলেন্স চলাচলের উপযোগি করে রাখতে সড়কটিকে। ওখানে ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দে কাজ করানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বললেন, কাজের বিল দেওয়া হয় নি। আমি অফিসের কাজে ঢাকায় আছি। ফিরে ভাঙনস্থলে যাব। কি কাজ হয়েছে, সড়কের কি অবস্থা দেখে আসবো।