বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হলে একজন শিক্ষার্থীকে একটি ভর্তি ফরম কিনলে হবে না। কিনতে হবে একাধিক ফরম। ডে ও মর্নিং শিফটের জন্য ২টি ফরম ক্রয় করা বাধ্যতামূলক। কোনো শিক্ষার্থীর কোনো কোটার যোগ্যতা থাকলে (বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, সরকারি কর্মচারি বা অন্য কিছু) তাকে প্রতিটি কোটার জন্য ডে ও মর্নিং শিফটের জন্য আরও ২টি করে ফরম কিনতে হয়। অর্থাৎ কোটার যোগ্যতা রয়েছে এমন একজন শিক্ষার্থীকে ভর্তির জন্য ন্যূনতম ৪টি ফরম কিনতে হচ্ছে এবং এজন্য ১১০ টাকা করে ৪৪০ টাকা দিতে হচ্ছে বিদ্যালয়ে। অনলাইনে এখানে কোনো আবেদন গ্রহণ করা হয় না। ফরম পূরণ করে দাখিল করতে হয়। অদ্ভুত এই নিয়মটি অনুসরণ করা হচ্ছে জেলা শহরের সরকারি এসসি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। গতকাল দৈনিক সুনামগঞ্জের খবরে এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর ২০২৩ সনের শিক্ষার্থী ভর্তি করতে প্রতি শিক্ষার্থীর ভর্তির আবেদন দাখিলের জন্য ১১০ টাকা ফিস নির্ধারণ করেছে। অনলাইনে আবেদনের সুযোগ রয়েছে। তবে অফলাইনে আবেদন নেয়ার ক্ষেত্রেও কোনো বাধা নেই। এসসি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে মাউশিঅ’র নির্দেশ অমান্য করে ভর্তিচ্ছুদের নিকট একাধিক ফরম বিক্রির বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। ভর্তিচ্ছুদের নিকট থেকে ফরম বিক্রি বাবদ যে অতিরিক্ত টাকা নেয়া হচ্ছে তা কোথায় জমা হয় সে বিষয়েও জানা যায়নি কোনো তথ্য। একটি সরকারি বিদ্যালয়ে সরকারি নির্দেশ অমান্য করে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে অতিরিক্ত ফরম বিক্রির নামে ২ থেকে ৪ গুণ বেশি টাকা আদায় করার এই অনিয়ম জেলা শহরের বুকে প্রকাশ্যে চলছে। এমন অনৈতিক কর্মকা- কেবল নিন্দাযোগ্যই নয় বরং দুর্নীতিজনিত অপরাধকা-ও বটে।
প্রধান শিক্ষক আরেক অদ্ভুত কথা বলেছেন। তিনি গণমাধ্যমে বলেছেন, বেশি বেশি ফরম কিনলে লটারিতে টিকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এমন বালখিল্য যুক্তি একজন প্রধান শিক্ষকের মুখ থেকে বের হতে পারে তা আমাদের ভাবনার অতীত। বর্ণিত বিদ্যালয়টি সরকারি প্রতিষ্ঠান। সরকারি নীতিমালার বাইরে কোনো আর্থিক লেনদেন করার এক্তিয়ার নেই এই প্রতিষ্ঠানের। ভর্তি ফরম বিক্রির অর্থ নিয়ম মোতাবেক সরকারি কোষাগারে জমা হওয়ার কথা, ভর্তি প্রক্রিয়ায় খরচ হলেও আয় ও ব্যয়ের যথাযথ হিসাব সরকারি হিসাব রক্ষণ অফিসের সাথে সমন্বয় করার কথা। তাহলে এই যে ২ থেকে ৪ গুণ বেশি টাকা আদায় করা হচ্ছে সেই টাকা যায় কোথায়? সরকারি কোষাগারে নিশ্চয়ই নয়, কোষাগারে জমা দেয়ার জন্য কেউ নিয়মের বাইরে যেয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে টাকা আদায় করতেন না। স্পষ্টতই ব্যক্তিগত লাভালাভের জন্য এখানে এই অনৈতিক কর্মকা- করা হচ্ছে। এজন্য ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ অতিরিক্ত টাকা আদায়ের সাথে জড়িত সকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।
একজন শিক্ষার্থী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রবেশের সময়ই যখন দুর্নীতি যুক্ত আচরণের শিকার হয় তখন এর নেতিবাচক প্রভাব তার মনে চিরস্থায়ী হতে থাকে। শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত পাঠক্রমের সাথে নৈতিকতার পাঠ গ্রহণ করবে বলে আমরা সকলে প্রত্যাশা করি। শিক্ষক ও শিক্ষাঙ্গনই শিশু মনকে বিকশিত করতে সবচাইতে বেশি ভূমিকা রাখে। এরকম অবস্থায় যখন জেলা শহরের সরকারি এসসি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ঢোকার সময়েই এমন অনৈতিকতার পাঠ দেয়া শুরু হয় তখন আসলে আমরা সুগুণাবলী সম্পন্ন ভবিষ্যৎ নাগরিক পাব কোথায়? তাই এমন দুর্নীতি প্রবণতাকে শুরুতেই রুখতে হবে।
- বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাফিজ আর নেই
- ভালো করেছে মেয়েরা/ জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬৬৮ জন, জেলায় সেরা জুবিলী