২১ শিক্ষক কর্মচারী এক বছর ধরে বেতন পাচ্ছেন না/ ইউএনওকে দোষছেন বঞ্চিতরা

জগন্নাথপুর অফিস
জগন্নাথপুর উপজেলার একমাত্র সরকারি কলেজ জগন্নাথপুর সরকারি কলেজের ২১ শিক্ষক ও কর্মচারীরা ১২ মাসের বকেয়া বেতন পাচ্ছেন না। ছয় মাসের বেতন চেয়ে বিল দাখিল করা হলেও বেতন বিলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্বাক্ষর না করে শিক্ষক ও কর্মচারীর সঙ্গে দুব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জগন্নাথপুর সরকারি কলেজ সূত্র জানায়, ১৯৮৭ সালে জগন্নাথপুর কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৮ সালে কলেজটি জাতীয়করণের গেজেট প্রকাশ করা হয়। এরপর থেকে
জাতীয়করনের দাপ্তরিক কার্যক্রম চলছে । মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর মাউসির সিদ্ধান্ত মোতাবেক সরকারি করনের ঘোষণা হলেও দাপ্তরিক কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আগের মতো বেসরকারি নিয়মে শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেসরকারি অংশের বেতন ভাতা ও আনুষঙ্গিক বিল পরিশোধ করার কথা। পরিপত্র অনুযায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কলেজ অধ্যক্ষের যৌথস্বাক্ষরে এসব বেতন বিলে স্বাক্ষর করবেন।
জগন্নাথপুর সরকারি কলেজ শিক্ষক ও কর্মচারীরা জানান, নানা অজুহাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলাম শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন বিলে স্বাক্ষর করছেন না৷ এক বছরের বকেয়া বেতন বিল জমা হলেও ছয় মাসের বকেয়া বেতন বিল দাখিল কওে শিক্ষকরা বার বার তাঁর সঙ্গে দেখা করে বেতন বিলে স্বাক্ষর দিতে অনুরোধ করেছেন। তিনি স্বাক্ষর না করে কলেজের শিক্ষক ও কর্মচারীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।
জগন্নাথপুর সরকারি কলেজের অফিস সহকারী বকুল রায় জানান, এক বছরের বকেয়া বেতন না পেয়ে ধার দেনা করতে করতে এখন নিরুপায় হয়ে গেছি। বেতন বিল নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে গেলে তিনি খুব খারাপ ব্যবহার করেন।
জগন্নাথপুর সরকারি কলেজের প্রভাষক আব্দুল বাতেন অভিযোগ করে বলেন, বেতন বিলের জন্য ইউএনওর দপ্তরে গেলে নানা অজুহাতে তিনি আমাদের কে ফিরিয়ে দিচ্ছেন। একাধিকবার শিক্ষক ও কর্মচারীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছেন। লজ্জায় আমরা কিছু বলি নি। এখন আমরা বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নামার চিন্তা করছি।
জগন্নাথপুর সরকারি কলেজের সিনিয়র শিক্ষক প্রভাষক বিজিত বৈদ্য বলেন, শিক্ষক ও কর্মচারীদের সঙ্গে ইউএনও ক্ষমতার অপব্যবহার ও অমানবিক আচরণ করছেন। এতে আমরা ব্যতিত।
জগন্নাথপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাহিদুল ইসলাম বলেন, কলেজে ১৭ জন শিক্ষক ও চারজন কর্মচারী রয়েছেন। তাদের বেতন বিলে স্বাক্ষর দিতে একাধিকবার অনুরোধ করেও কোন কাজ হয় নি।
জগন্নাথপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মিজানুর রহমান বলেন, সম্প্রতি কলেজের একটি অনুষ্ঠানে গেলে কলেজের শিক্ষক কর্মচারীরা বেতন না পাওয়ার অসন্তোষের কথা জানিয়ে আন্দোলনে নামার কথা বলেন। আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তাদের বেতন না পাওয়ার অসন্তোষের বিষয়টি অবহিত করে দ্রুত এ বিষয়টি সুরাহার অনুরোধ করেছি।
জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলাম বলেন, কলেজের নানা আয় ব্যয়ের হিসেব নিয়ে ১৫ দিন আগে চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু তদন্ত কমিটিতে অধ্যক্ষ দুই জন প্রতিনিধি দিচ্ছেন না। কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে বেতনের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সিলেটের সহকারী পরিচালক প্রতাপ চন্দ্র চৌধুরী বলেন, মাউসির পরিপত্র অনুযায়ী যেসব কলেজে পরিচালনা কমিটি নেই, সেই সব কলেজে ইউএনওরা শুধু আর্থিক বিষয়টি দেখার জন্য যৌথ স্বাক্ষরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন পাওয়া তাদের অধিকার। এটা না দেওয়া হয়ে থাকলে দুঃখজনক ।