৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ের সড়ক ও সেতু/ উদ্বোধনের পাঁচ মাস পরও চলছে না বড় যানবাহন

বিশেষ প্রতিনিধি
তিনশ কোটি টাকার পাগলা-সৈয়দপুর সড়কে চলছে না বড় যানবাহন। চার কিলোমিটার আঁকা-বাঁকা সড়ক ও দুটি সরু বেইলি সেতুর জন্য কাজে আসছে না সড়কটি। কুশিয়ারা নদীর উপর কোটি টাকা ব্যয়ে রানীগঞ্জ সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে গেল বছরের অক্টোবর মাসে। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গেল সাত নভেম্বর কুশিয়ারা সেতুর উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের প্রায় পাঁচ মাস পরেও এই সড়কপথের কাঙ্খিত সুবিধা পায় নি সুনামগঞ্জবাসী। সড়কের কাটাখাল বেইলি সেতু ভেঙে যোগাযোগ বন্ধের ঘটনাও ঘটেছে সম্প্রতি।
সড়ক ও জরপথ বিভাগের দায়িত¦শীলরা জানান, ৪৬ কিলোমিটার পাগলা-জগন্নাথপুর-সৈয়দপুরের সড়কে বিভাগের দীর্ঘ রানীগঞ্জ সেতুসহ ৩৬ কিলোমিটার অংশ সুনামগঞ্জ জেলার সীমানায় এবং বাকী ১০ কিলোমিটার হবিগঞ্জ জেলার সীমানায় পড়েছে। গেল সাত নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রানীগঞ্জ সেতু ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন। এরপর এই সেতু ও সড়ক দিয়ে আন্ত:জেলা বাসসহ মালবাহী ট্রাক, কার্গো চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। প্রথম কয়েক দিন এই সড়কে বড় যানবাহন চললেও সাড়ে তিন কিলোমিটার সরু আঁকা-বাকা সড়ক ও দুটি বেইলি সেতুর কারণে এই পথ ব্যবহার করছেন না বড় যানবাহনের চালকরা।
সুনামগঞ্জ-ঢাকা সড়কে চলাচলকারী শ্যমলী পরিবহনের চালক জয়নাল আবেদীন বললেন, আমি এই সড়ক দিয়ে দুইদিন গিয়েছিলাম। সুনামগঞ্জের শেষ সীমানা এনায়েতগঞ্জ পর্যন্ত সড়কে কোন সমস্যা নেই। এরপরের কিছু অংশে কাজ চলছে, কিছু অংশে এখনো কাজ হয় নি। যেখানে কাজ হচ্ছে, সেই অংশ দিয়ে দিনে গাড়ী চলাচল করা কঠিন। আর যে অংশে কাজ হয় নি, সেখানে সড়কের প্রশস্ততা কম। সরু আঁকা-বাকা সড়কে সিএনজি-অটো রিক্সাসহ অসংখ্য ছোট গাড়ী দিনে চলাচল করায় ওই অংশ দিয়ে বড় গাড়ী চালানোই যায় না। সময় বেশি লাগে, এজন্য এই পথে আর যাই নি আমি।
পণ্য পরিবহনের একটি বড় ট্রান্সপোর্ট সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের চালক রফিকুল ইসলাম বললেন, এই পথে গাড়ি নিয়ে আসলে হবিগঞ্জের অংশের তিন চার কিলোমিটারে গাড়ি চালানো কঠিন হয়। আবার জগন্নাথপুরের কাটাখাল ও বমবমি সেতু ভেঙে গাড়ি খাদে পড়ার ভয়ও আছে। এজন্য এই পথ ব্যবহার করার চিন্তা বাদ দিয়েছি আমরা।
জগন্নাথপুরের নারিকেলতলার পাশের কাটাখাল বেইলি সেতু ও বমবমি বাজারের বমবমি বেইলি সেতুর দুর্ভোগে কথা জানিয়ে মাইক্রো চালক রাজন পাল বললেন, দূরপাল্লার বড় গাড়ি এই পথ গেলে বিপদে পড়ার ভয় আছে। পথের নারিকেলতলার কাছের কাটাখাল ও বমবমি’র সেতু ভেঙে আরসিসি সেতু না করা পর্যন্ত এই পথে ঝুঁকি থাকবে। গত ১১ মার্চ কাটাখাল সেতু ভেঙে সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল।
সুনামগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রামানিক এই পথ দিয়ে বড় যানবাহন কম চলছে স্বীকার করে বললেন, বমবমি বেইলি সেতু ভেঙে নতুন সেতু করার জন্য তত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কার্যালয়, সিলেট থেকে দরপত্র হয়েছে। আশাকরছি এপ্রিল মাসেই ওই সেতু’র কাজ শুরু হবে। কাটাখাল বেইলি সেতুসহ এই পথ প্রশস্তকরণের প্রস্তাবনা সুনামগঞ্জ-হবিগঞ্জ জেলায় গেল বছর বন্যা পরবর্তী পূনর্বাসন ও পূন-নির্মাণ প্রকল্পে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ে আড়াই হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের পর্যালোচনা সভা এমাসের পাঁচ তারিখে হয়েছে। এখন প্রকল্পটির প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে। পরিকল্পনা কমিশনে পর্যালোচনা শেষে এটি এক নেক’এ অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন হবে। একনেক’এ অনুমোদন হলে প্রকল্প বাস্তবায়নের অনান্য কাজ শুরু কবে।