ধর্মপাশা প্রতিনিধি
গৃহিণী রূপালী রাণী দাসের হিসেব অনুযায়ী তিনি বেসরকারি সংস্থা উদ্দীপন থেকে দুইবার ঋণ নিয়েছিলেন। স্থানীয় অন্য গ্রাহকেরাও জানিয়েছেন সে কথা। কিন্তু উদ্দীপনের হিসেব বলছে রূপালী ৬ষ্ঠ বারের মতো ঋণ নিয়েছেন। আর এ ঋণের পরিমাণ ৬০ হাজার টাকা। সম্প্রতি কিস্তি আদায়ের জন্য তার বাড়িতে হানা দিচ্ছে সংস্থার লোকজন। এতে করে অসহায় রূপালী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। কে, কীভাবে তাঁর নাম, ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার ও স্বাক্ষর জাল করে এ ঋণ নিয়েছেন সে ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। এ থেকে উত্তরণের উপায় খোঁজতে রূপালী সংস্থার ব্যবস্থাপকের কাছে ধরনা দেওয়াসহ স্থানীয়দের ধারে ধারে ঘুরছেন। রূপালী ধর্মপাশা উপজেলার সদর ইউনয়িনের কামলাবাজ গ্রামের দরিদ্র কর্মকার দীলিপ চন্দ্র দাসের স্ত্রী।
রূপালী চন্দ্র দাস জানিয়েছেন, তিনি তাঁর নিকট আত্মীয়কে জামিনদার করে এবং বাড়ির দলিল দিয়ে উদ্দীপন থেকে একবার ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে সেই টাকা পরিশোধ করে আবারও ২০ হাজার টাকা ঋণ নেন। সেই টাকাও তিনি যথা সময়ে পরিশোধ করে দেন। পরবর্তীতে তিনি কোনো ঋণ গ্রহণ করেননি। কিন্তু গত বছরের ১৭ নভেম্বর রূপালীর নামে ৬০ হাজার টাকা ঋণ উত্তোলন হয়েছে। এ ঋণের কিস্তির জন্য সম্প্রতি তাঁকে চাপ দিতে থাকে উদ্দীপনের লোকজন। মাথায় বাজ ভেঙে পড়ে তাঁর। ফলে তিনি দিশেহার হয়ে পড়েন। এ ব্যাপারে কথা বলতে রোববার বিকেল চারটার দিকে রূপালী স্থানীয় ইউপি সদস্য রিপন মিয়াসহ কয়েকজন নিকটাত্মীয়কে নিয়ে উদ্দীপনের ধর্মপাশা কার্যালয়ে যান। এ সময় ঋণ বিতরণ রেজিস্টারে দেওয়া রূপালীর স্বাক্ষরের গড়মিল দেখতে পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট শাখার হিসাবরক্ষক শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি রূপালীর হাতে টাকা তুলে দিয়েছি। রেজিস্টারে রূপালীর স্বাক্ষর রয়েছে। টাকা দেওয়ার সময় আমি ওই রেজিস্টারে আমি স্বাক্ষর করিনি। দিন শেষে আমি রেজিস্টারে স্বাক্ষর করেছিলাম।’
উদ্দীপনের ধর্মপাশা শাখার ব্যবস্থাপক জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘ঋণ প্রদানের দিন আমি অফিসে ছিলাম না। ঋণ বিতরণ রেজিস্টারে রূপালীর স্বাক্ষর মিল না থাকলেও আবেদন ফরমে দেওয়া স্বাক্ষরের মিল রয়েছে। মাঠকর্মী জুঁই রায় রূপালীকে দিয়ে টাকা উত্তোলন করে নিজে নিয়েছে। জুঁই রূপালীর নামে এক মাসের ৬ হাজার টাকা কিস্তিও জমা দিয়েছে। এ ছাড়াও জুঁইয়ের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করে অফিসে জমা না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। দায় স্বীকার করে ৩ লাখ টাকা জুঁই অফিসে জমাও দিয়েছে। এ ব্যাপারে এ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। বিষয়টি সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত রূপালীকে কিস্তির জন্য কোনো চাপ দেওয়া হবে না।’
সংশ্লিষ্ট মাঠকর্মী জুঁই রায় বলেন, ‘রূপালীর ঋণের ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। আমার স্বাক্ষর জাল করে রূপালীর নামে কিস্তি জমা দেওয়া হয়েছে। আমি চাকরি থেকে পদত্যাগ করতে চেয়েছিলাম। ফলে ব্যবস্থাপক আমাকে ফাঁসানোর জন্য এমন অভিযোগ করছেন। আরএম (আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক) এ ব্যাপারে আমার সাথে অশালীন ভাষায় কথা বলেছেন।’
সুনামগঞ্জ উদ্দীপনের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক (আরএম) প্রণব কুমার দাসের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য জানা যায়নি।
- বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের ফি নির্ধারণ করা হচ্ছে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী
- ছাইয়া কিত্তা বাঁধে ধস/ হুমকির মুখে দেখার হাওর